- বাল্ট্রা দ্বীপ
- রক্ত বৃষ্টি
- ফুটন্ত নদী
- চুম্বক পাহাড়
- জমজ মানুষের গ্রাম
- অবিরাম বজ্রপাত
- ইস্টার দ্বীপের আজব মূর্তি
- মানুষের চাঁদে যাওয়া
- রহস্যময় পীড়ামিড
- বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল
১) রহস্যময় বাল্ট্রা দ্বীপ
বাল্ট্রা দ্বীপের অবস্থান দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরে। এটি মূলত একটি মানববসতি শূন্য একটি দ্বীপ। ইকুয়েডরের নিকটবর্তী তেরোটি দ্বীপ নিয়ে নিয়ে গঠিত গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ। আর এই অঞ্চলের বারোটি দ্বীপ থেকে বাল্ট্রা দ্বীপ একেবারে আলাদা, অদ্ভুত এবং রহস্যময়। মানব বসতি নেই বলে মানুষ এই দ্বীপকে মৃত দ্বীপ বলে ডাকে। এই দ্বীপকে অভিশপ্ত দ্বীপ ও বলা হয়।
জানা যায় যে বাল বাল্ট্রা দ্বীপে একসময় মানব বসতি ছিল। কিন্তু কয়েকশো বছর আগে এই দ্বীপে কি এক অদ্ভুত রোগ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মানুষ মরতে শুরু করে এবং ভয় পেয়ে দ্বীপবাসীরা সবাই এই দ্বীপ ছেড়ে পালায়। তারা ফিরে গিয়ে সবাইকে জানায় এই দ্বীপটি অভিশপ্ত। কেউ যেন দ্বীপের আশেপাশে না যায়। একবার গেলে আর প্রাণ নিয়ে ফেরা যাবে না। তার পর থেকে দ্বীপটি অভিশপ্ত দ্বীপ নামে পরিচিতি পেয়েছে।
বাল্ট্রা দ্বীপের রহস্যের কথা বিশ্ববাসীর সামনে আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। এ সময় দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি দ্বীপে এয়ারবেস স্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। একটি এয়ারবেসের একজন অফিসার ছিলেন ফ্রান্সিস ওয়াগনার নামে এক ব্যক্তি। তার মাধ্যমেই বাল্ট্রা দ্বীপের সম্পর্কে মানুষ প্রথমে জানতে পারে। এরপরে অনেকেই এই দ্বীপের রহস্য নিয়ে কথা বলে।
বাল্ট্রা দ্বীপ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপপুঞ্জে অব্স্থিত হওয়ায় এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু এক ফোঁটা বৃষ্টিও বাল্ট্রাতে পড়ে না। বৃষ্টির প্রকোপ যত বেশি বৃষ্টি হোক না কেন এই দ্বীপে একফোঁটা বৃষ্টির পানিও পড়ে না। কোনো এক কারণে এই দ্বীপের অনেক উপর দিয়ে মেঘ উড়ে যায়।
সাধারণ অবস্থায় কম্পাসের কাঁটা সবসময় উত্তর-দক্ষিণমুখী হয়ে থাকে। কিন্তু এই দ্বীপে কম্পাসের কাঁটা কখনো স্থির হয়ে থাকে আবার কখনো এলোমেলোভাবে ঘুরতে থাকে আবার কখনো ভুলভাল দিক নির্দেশ করে। আরেকটা রহস্যজনক ব্যাপার হল বাল্ট্রা দ্বীপের উপর অবস্থানরত উড়োজাহাজ এর কম্পাসের কাঁটা ও এমন ভুলভাল দিক নির্দেশ করে।
(সূত্র : ইন্টারনেট)
২) কেরালার রক্ত/লাল বৃষ্টি
বৃষ্টি আমাদের সবারই পছন্দ। কিন্তু বৃষ্টির রঙ যদি হয় লাল তাহলে তা চিন্তা করতেই কেমন ভয়ঙ্কর লাগে। হ্যাঁ আপনারা ঠিকই শুনেছেন বৃষ্টির রং ও লাল হয়।
এমনটা ঘটে ছিল ভারতের ২০০১ সালের ২৫ শে জুলাই কেরালা রাজ্যে। কেরালার কোট্টাম এবং ইড্ডুকি জেলার মানুষের কাছে ছিল গরমকালের একটি সাধারণ দিনের মতোই। হঠাৎ আকাশ মেঘে ঢেকে গেল। বৃষ্টি নেমে এলো আকাশ থেকে। এই বৃষ্টি কিন্তু বৃষ্টি আর পাঁচটা সাধারণ বৃষ্টির মতো ছিল না। এই বৃষ্টির রঙ ছিল লাল। দেখে মনে হবে যেন রক্তের বন্যা। প্রত্যক্ষদর্শীরা কেবলমাত্র লাল রঙই না হলুদ, সবুজ ও কালো রঙের বৃষ্টির কথা বলেছেন।
২৫ শে জুলাই থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে এই রক্ত বৃষ্টির খবর পাওয়া যায়। ১৮৯৬ সাল থেকে বহুবার এই অঞ্চল থেকে রক্ত বৃষ্টির খবর এসেছে। ২০১২ সালের ১৫ ই নভেম্বর থেকে ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে পূর্ব ও দক্ষিণ মধ্য শ্রীলংকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রক্ত বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান বৃষ্টির আগে আওয়াজ শোনা গিয়েছিল ও আকাশ উজ্জ্বল আলোয় ভরে উঠেছিল। বৃষ্টির ফলে গাছের পাতা ঝরে পড়ে এবং পাতায় ধূসর রঙের পোড়া দাগ তৈরি হয়। মাত্র কয়েক কিলোমিটার অঞ্চলে এই বৃষ্টি হয়েছিল। বেশিরভাগ বৃষ্টির সময় ছিল ১০ থেকে ২০ মিনিট। প্রতি কিলোমিটার বৃষ্টিপাতে প্রায় ৯ মিলিয়ন লাল রঙের কণা পাওয়া গেছে। সেই হিসাবে ৫০,০০০ কিলোগ্রাম কণা বৃষ্টির পানির সাথে নেমে এসেছিল।
এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে সেন্টার ফর আর্থ সাইন্স স্টাডিজ (CESS ) এর বিজ্ঞানীরা। প্রাথমিকভাবে এই বৃষ্টির জন্য উল্কা বিস্ফোরণ কে দায়ী করে । উল্কাপিন্ডের বিস্ফোরণের কারণে কয়েক টন উল্কা খন্ড মেঘের সাথে মিশে যায় ও বৃষ্টির সাথে ঝরে পড়ে । কিন্তু এই কারণটা খুব একটা যুক্তিযুক্ত ছিল না। কারণ স্ট্রাটোস্ফিয়ার এর উপর ছড়িয়ে পড়া উল্কা খন্ড কখনোই বারবার একই জায়গায় বৃষ্টির সাথে নেমে আসতে পারে না।
এছাড়া এর বিজ্ঞানীরা কয়েকদিন পরে বৃষ্টির নমুনায় কিছুর স্পোর লক্ষ করেন। তাই তারা তদন্তের দায়িত্ব দেয় ট্রপিক্যাল বোটানিক্যাল গার্ডেন এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট (TBGRI ) এর হাতে। তারা এ নমুনা পর্যবেক্ষণ করে এবং পর্যবেক্ষণের পর ২০০১ সালের নভেম্বর মাসে CESS ও TBGRI ভারত সরকারের তরফ থেকে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। রিপোর্ট অনুযায়ী বৃষ্টির লাল রঙের কারণ হিসেবে বৃষ্টিতে Trentepohlia প্রজাতির লাইকেনের অতিরিক্ত মাত্রায় উপস্থিতি দায়ী করা হয়েছে। পরবর্তীকালে বৃষ্টিপাতের এলাকায় পুনরায় পর্যবেক্ষণ করে এলাকায় ওই একই প্রজাতির লাইকেন লক্ষ্য করা যায়।
২০০৩ সালে কেরালার মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গডর্ফে লুইস ও সন্তোষ কুমার এই ঘটনার ওপর একটি কারণ ব্যাখ্যা করেন। CESS ও TBGRI এর রিপোর্টে যেখানে বলা হয় লাল বৃষ্টির আগে শুনতে পাওয়ার শব্দ ও উজ্জ্বল আলোর কোন সম্পর্ক নেই সেখানে লুইস ও কুমারের মতে ওই শব্দ ও আলোর মধ্যে এই রহস্যের উত্তর লুকিয়ে আছে। তারা লাল রংয়ের বৃষ্টিপাতের জন্য উল্কা খন্ড বিস্ফোরণকে কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন এবং জীবন্ত কোষ এর উপস্থিতি ব্যাখ্যা করতে তারা Panspermia hypothesis এর কথা উল্লেখ করেন। লাল বৃষ্টি থেকে প্রাপ্ত কোষগুলোকে মহাজাগতিক প্রাণের চিহ্ন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
বিজ্ঞানী চন্দ্রা বিক্রমসিংহ এরকম একটি তথ্য উপস্থাপন করেন।
এসকল তথ্য প্রমাণিত না হলেও লাল বৃষ্টিকে মহাজাগতিক প্রাণের উৎস রূপে উল্লেখ করা হয়। এসব ব্যাখ্যা এ ঘটনাকে রহস্যময় করে তুলেছে আজও এর সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। (সূত্র : ইন্টারনেট)
আরো পড়ুনঃ ভূমিকম্প কেন হয়? ভূমিকম্পে কী করণীয়
৩) রহস্যময় আমাজানের ফুটন্ত নদী
এ নদী আবিষ্কার করেছেন আন্দ্রে রূজো নামক এক বিজ্ঞানী। এ নদী আবিষ্কার এর পরই দুনিয়াজুড়ে এক আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬ কিলোমিটার। গভীরতা কম বেশি ২০ ফুট। আমাজনের একদম গহীনে নদীটি বয়ে চলেছে। নদীটির নাম মায়ানতুইয়াসো ; স্থানীয় ভাষায় এর ইভোরেজেলী। এই নদীর আশেপাশের অঞ্চলে কোন জীব জন্তু বাস করে না।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি ইউনিভার্সিটির জিওফিজিক্সের ছাত্র রূজো। ছোটবেলাতে দাদুর কাছে এরকম এক নদীর কাহিনী শুনেছিলেন তিনি। প্রথমে তিনি এটিকে কাল্পনিক মনে করেন। কিন্তু তিনি মনে মনে চিন্তা করেন যে আমাজনে এরকম নদী থাকতেই পারে। তাই তিনি এরকম নদী আবিষ্কারের চেষ্টা করতে থাকেন।
তাঁর গবেষণার সময় নদী বিষয়ক বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে প্রথমে এরকম নদী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন কিন্তু সবাই দাবি করেন আমাজনে এরকম ফুটন্ত নদীর কোন অস্তিত্ব নেই। কারণ এরকম থাকতে হলে আশে-পাশে আগ্নেয়গিরি থাকতে হয়। আমাজনের আশেপাশে তো কোন আগ্নেয়গিরি নেই তাই এরকম ওদের কথা চিন্তাই করা যায় না। কিন্তু তিনি তার কাজ বন্ধ রাখেননি। তিনি অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যান এবং শেষ পর্যন্ত আবিষ্কার করেন এই অদ্ভুত নদীর।
প্রায় ৮ দিনের হাঁটা পথ পাড়ি দেওয়ার পর পেরুতে তে অবস্থিত আমাজন অঞ্চলে আন্দ্রে রূজো দেখা পেলেন সেই আশ্চর্য নদীর। নদীর কাছে যেতেই নদীর উষ্ণতা সম্পর্কে ধারণা পান। পরে মেপে দেখেন যে পানির তাপমাত্রা ঠিক ১০৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। নদীতে প্রায়ই জীবজন্তুর মৃতদেহ দেখা যায়। তারা পানি খেতে আসে কিন্তু আর ফিরে যেতে পারে না। দিন দিন মৃত জীবজন্তু সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে।
আজ পর্যন্ত এই নদীর রহস্য সমাধান করতে পারেনি। আমাজনের গহীনে এই নদী কিভাবে আসলো তার ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারেনি। (সূত্র : ইন্টারনেট)
৪) লাদাখের ম্যাগনেটিক হিল বা চুম্বক পাহাড়
এখানে যে সড়কটি গেছে তা ক্রমশ পাহাড়ে উঠে গেছে। কিন্তু আপনি যদি গাড়ি ইঞ্জিন বন্ধ করে রাস্তায় রেখে দেন তাহলে তা ক্রমশ পাহাড়ের দিকে উঠে যাবে। এটি একটি অদ্ভুত ব্যাপার।
শুধু গাড়ি নয় লাদাখের এই অঞ্চলের উপর দিয়ে কোন বিমান যাওয়ার সময় খুব সর্তকতা অবলম্বন করতে হয়। বিমানের গতি পথ যাতে পরিবর্তিত না হয়ে যায় সে দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হয় পাইলটকে।
ওই এলাকার বাসিন্দারা মনে করেন যে পাহাড়ে অতিপ্রাকৃত শক্তি রয়েছে যার জন্য গাড়ি এমনি এমনি পাহাড়ের দিকে ছুটে যায় । অনেকে আবার মনে করে যে এই পাহাড়টি চুম্বকের তৈরি। এজন্য গাড়ি কে পাহাড়টি নিজের দিকে আকর্ষণ করে। কিন্তু এ পাহাড়ের রহস্য এখনো সমাধান হয়নি।
বর্তমানে এমন একটি জায়গা সন্ধান পাওয়া গেছে যেখানে আপনি যেদিকেই তাকান না কেন চোখ পড়বে জোড়ায় জোড়ায় একই রকম জমজ মানুষের।
জায়গাটি হচ্ছে ভারতের কেরালা রাজ্যের কোধিনি গ্রাম। এটি সবার কাছে ” টুইন গ্রাম ” নামে পরিচিত। এটি কেবল ভারত নয় পুরো বিশ্বের কাছে একটি বিস্ময়। কারণ এটি একমাত্র গ্রাম যেখানে আছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জমজ এর বাস।
৬) অবিরাম বজ্রপাত
৭) ইস্টার দ্বীপের রহস্যময় মূর্তি
জনমানবহীন ইস্টার দ্বীপের নেই কোন বসতি। এই দ্বীপটিকে পৃথিবীর অন্যতম নিঃসঙ্গ দ্বীপ ও বলা হয়। এখানকার প্রতিটি মূর্তি বিশাল পাথর কেটে তৈরি করা হয়েছে। ধারণা করা হয় পলিনেশীয় কিছু দ্বীপে পাথরের গায়ে খোদাই করে ছবির নমুনা দেখা যায়। যাকে বলে পেট্রগ্লিপস। পেট্রগ্লিপস সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় ভান্ডার রয়েছে এই দ্বীপে। বিশেষজ্ঞদের মতে এখানে প্রায় ১০০০ টি স্থানে ৪ হাজারের মতো পেট্রগ্লিপস এর নমুনা আছে। দীপটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো সাতটি বৃহদাকার ভাস্কর্য। যাদের আসলে ” নেভল অফ দা ওয়ার্ল্ড “ বলা হয়। স্থানীয়রা এসব ভাস্কর্যকে বলে থাকে মোয়াই। পুরা দীপটিতে মোয়াই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। একেকটি ভাস্কর্য প্রায় ১২ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট, ওজন কম হলেও ২০ টনের বেশি হবে। সবচেয়ে বড় ভাস্কর্যটির উচ্চতা ৩২ ফুট ওজন প্রায় ৯০ টন।
এ দ্বীপটি আবিষ্কার করেন অ্যাডমিরাল জ্যাকব রগেউইন। ডাচ এই অভিনেত্রী দ্বীপটির নাম দেন ইস্টার আইসল্যান্ড। বিশ্ব বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব থর হেয়ারডাল প্রচুর গবেষণা ও খননকার্যের পর তথ্য দিলেন ৩৮০ খ্রিস্টাব্দ পেরু থেকে কিছু মানুষ এখানে বসবাস শুরু করেন। তারা এসব রাস্তা, মানমন্দির, সুড়ঙ্গ তৈরি করেছিল। ১২৮০ খ্রিস্টাব্দ পেরু থেকে আসা কিছু লোকজন এই দ্বীপটি দখল করে। এমনকি তারা দাবি করে মূর্তিগুলো তাদের তৈরি।
তাছাড়া এখানে আছে পাথরে তৈরি ৮০০ টি মূর্তির মাথা। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় মাথাটির উচ্চতা ৩২ ফুট এবং ওজন ৯০ টন। আর সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো এখানে যে মূর্তির মাথা গুলো দেখা যায় মাটি খনন করলে পুরো দেহই পাওয়া যায়।
আর এ দ্বীপে আহু নামক পরিচিত বিশাল বিশাল প্ল্যাটফর্ম পাওয়া যায়। এছাড়া এখানে বিস্ময়কর পাথরের দেয়াল, ঘর, খোদাইচিত্র পাওয়া যায়।
আরেকটি রহস্য হল মূর্তির মাথায় টুপি পরানো। দেখেই বুঝা যায় টুপিগুলোর কাজ অনেক পরে হয়েছে। আবার টুপি তৈরির কাজ কাঁচা হাতের কাজ। কিন্তু ভাস্কর্যগুলো ছিল একদম নিখুঁত। কেনই কেনইবা টুপি পরানো হল বা টুপি পরে কেন পোড়ানো হলো বা মূর্তি গুলো কিভাবে এখানে আসলো বা কে তৈরি করল তাও কিন্তু রহস্যজনক।
মূর্তি গুলো অতি প্রাচীন অথচ উন্নত সভ্যতার চিহ্ন। এ ব্যাপারটা রহস্যজনক। আবার অনেকে আবার এটাও চিন্তা করে যে দীপটিতে বাইরের জগত থেকে অভিবাসীরা বাস করে গেছে যার ধ্বংসাবশেষ এই মূর্তি গুলো। ইউনেস্কো কর্তৃক এ রহস্যময় স্থানটিকে বিশ্বের অন্যতম ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়।
৮) মানুষের চাঁদে যাওয়া
১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই মানবজাতির জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। ওই দিনেই চন্দ্রপৃষ্ঠে পা পড়ে মানুষের। মানুষ জয় করে চাঁদকে। কিন্তু এ চাঁদে যাওয়া ঘটনাটি বিতর্কিত হয়ে গেছে। অনেকে মনে করেন চাঁদে মানুষ যায়নি।
১৯৬৯ সালে চাঁদে মানুষের প্রথম পা পড়লেও এই ঘটনার যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৭ তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের স্পুটনিক‘ মহাকাশে উৎক্ষেপণ এর মাধ্যমে।
প্রথম চাঁদে পৌঁছানোর দৌড়ে এগিয়ে যায় রাশিয়া।
এরপর রাশিয়া লুনা ৯ মহাকাশযান ১৯৬৬ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে আরো একবার চাঁদে সফল অবতরণ করেছিল । সেই সময় থেকে প্রথমবারের মতো চাদের উপরিপৃষ্ঠের একটি ছবি তোলা সম্ভব হয়েছিল। এরপর লুনা ১০ নামে একটি আরো আরো একটি মিশন পাঠায় রাশিয়া। এটিই ছিল প্রথম কোন মহাকাশযান যা চাঁদের কক্ষপথে স্থাপন করা সম্ভব হয়েছিল। চাদের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে গবেষণায় সহায়ক হয়েছিল ওই মিশন।
সোভিয়েত ১৯৫৯ সালের ১২ ই সেপ্টেম্বর লুনা ২ নামের একটি মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করে। সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ তখন একটি অস্বাভাবিক কাজ করেছিল। তারা এত গোপনীয়তা সত্ত্বেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী বার্নার্ড লোভেলের সাথে শেয়ার করেছিল। এমনকি এর গতিপথ সম্পর্কে তাকে জানানো হয়েছিল। এই বার্নার্ড ই বিশ্বের সব পর্যবেক্ষকদের এই মিশনের সাফল্য সম্পর্কে নিশ্চিত করেছিলেন।
সাত বছর পর লুনা ৯ নামের মহাকাশযানটি পাঠানো হয়। এটি চাঁদে অবতরণ করার আগে সোভিয়েত ও আমেরিকার বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন চন্দ্রপৃষ্ঠ এই যানটির জন্য খুবই নরম হবে। এমন আতঙ্ক ছিল যে চাদের পৃষ্ঠ ধুলাবালি দিয়ে ঢাকা যার ভেতরে কোনো যান ল্যান্ড করা মাত্রই চাদের পৃষ্ঠে ডুবে যেতে পারে।
কিন্তু সোভিয়েতের এই যানটি প্রথমবারের মতো দেখিয়েছে যে চাঁদের পৃষ্ঠ শক্ত এবং এই তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
” বিজ্ঞানের জগতে এটা ঐতিহাসিকের আবিষ্কার যা পরবর্তী মিশনে সাহায্য করেছে “- বলেছেন জ্যাকসন।
তাছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৬১ সালে মহাকাশে প্রথম মানুষ পাঠায় এবং ১৯৬৫ সালে প্রথম স্পেস ওয়াকের মতো ঘটনা ঘটায়। ১৯৬৫ সালে মহাকাশে প্রথমবারের মতো স্পেস ওয়াক করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই স্পেস ওয়াক স্থায়ী হয়েছিল ১২ মিনিট।
এরপর ১৯৬৮ সালে বড় একটি ঘটনা ঘটায় যুক্তরাষ্ট্র। অ্যাপোলো ৮ মিশনে তারা মানুষ বহনকারী একটি যান চাঁদে পাঠায়। সেটি চাঁদের কক্ষপথে ঘুরে আবার নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসে। এর এক বছরের কম সময়ের মধ্যে পাঠানো হয় অ্যাপোলো ১১। চাদের পিঠে অবতরণ করে নীল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন। চাঁদের পৃষ্ঠে নেমে ছবি তুলেন ও আমেরিকার পতাকা চাঁদের পৃষ্ঠে রেখে আসেন।
কিন্তু এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের ৫ শতাংশ মানুষ চাঁদে যাওয়ার ঘটনাকে স্বীকারই করে না । তবে এসব গুজব বা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব পাত্তা পেতে শুরু করে ১৯৭৬ সালে একটি বই প্রকাশ হওয়ার পর । বইটির লেখক একজন সাংবাদিক বিল কেসিং । তিনি নাসার একটি ঠিকাদার কোম্পানির জনসংযোগ বিভাগের কিছুদিন কাজ করেছিলেন । তার বইটির নাম ছিল ” উই নেভার ওয়েন্ট টু মুন : আমেরিকাস থার্টি বিলিয়ন ডলার সুইন্ডল ” ।
লেখক এর মূল বক্তব্য হচ্ছে মানুষ কখনো চাঁদে যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আসলে তিন হাজার কোটি ডলারের প্রপঞ্চনা করা হয়েছে। বইটিতে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছিল যা পরবর্তী বছরগুলোতে চন্দ্র অভিযানের সাফল্য অবিশ্বাসীরা বিতর্কের সময় উল্লেখ করেছেন।
চাদে তোলা কিছু ছবি দিয়ে তারা উদাহরণটি দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তাদের প্রশ্ন চাঁদে তো বাতাস নেই তাহলে সেখানে মার্কিন পতাকা উড়লো কেমন করে? আরেকটি প্রশ্ন চাঁদের আকাশে কোনো তারা মন্ডল কেন দেখা যাচ্ছে না কেন?
এই পতাকা উড়ার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব কে নাকচ করে দেয়ার মতো অনেক বৈজ্ঞানিক যুক্তি আছে বলেছেন ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার মাইকেল রিক। তিনি বলেন নীল আমস্ট্রং এবং বাজ আল্ড্রিন যখন পতাকাটি চাঁদের মাটিতে লাগাচ্ছিলেন তখন সেটি কুঁচকে গিয়েছিল। আর যেহেতু চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর তুলনায় ছয় গুণ কম তাই কুচকানো পতাকাটি সে রকমই ছিল।
চাঁদের আকাশে তারামণ্ডল নেই কেন এর উত্তরে রচেস্টার ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন এর কারণ চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়। সে কারণে ছবির এত উজ্জলতা চোখে ধরা পড়ছে আর এই উজ্জ্বলতার কারণে পেছনের আকাশের তারার আলো ম্লান হয়ে গেছে। এছাড়া ক্যামেরার এক্সপোজার টাইম হয়তো অনেক বেশি ছিল।
অনেকের মতে চাদের কোন আর্দ্রতা নেই তাহলে পায়ের ছাপ কিভাবে পড়বে। প্রত্যুত্তরে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিলেন আরিজনা স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মার্ক রবিনসন। তাদের মতে চাদেরপরি পৃষ্ঠ অনেক নরম তাই পায়ের ছাপ পড়বে এটাই স্বাভাবিক আর আরে ছাপ লক্ষ লক্ষ বছর পরেও সে সেরকমই থাকবে। কারণ চাদের কোন বায়ুমণ্ডল নেই আর বাতাস ও নেই।
আরেকটি জনপ্রিয় তথ্য হচ্ছে পৃথিবীকে ঘিরে যে তেজস্ক্রিয় তার পরিমণ্ডল তাতে নভোচারীদের মারা যাওয়ার কথা। তারা কিভাবে চাঁদে যেতে পারে? পৃথিবীকে ঘিরে তেজস্ক্রিয়তার এই অঞ্চলটিকে বলা হয়। তবে নাসার বিজ্ঞানীদের মতে অ্যাপোলো ১১ এর ক্রু যারা ছিলেন তারা এই ছিলেন মাত্র ২ ঘন্টা এবং যেখানে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা সবচেয়ে বেশি সেখানে তারা পাঁচ মিনিট এর কম সময় অবস্থান করেছিলেন। এজন্য তেজস্ক্রিয়তার সেরকম কোনো প্রভাব পড়েনি।
অনেকে মনে করেন ১৯৬৯ সালে আমেরিকার প্রযুক্তি মহাকাশযান পাঠানোর মত উন্নত হলেও চাদে অবতরণ করার মত তত উন্নত ছিল না। আর আমেরিকা সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে পিছিয়ে ছিল। তাহলে সোভিয়েত ইউনিয়নে পারেনি আমেরিকা কিভাবে পাড়বে। আবার অনেকে মনে করে চাঁদে যাওয়ার ঘটনাটি পুরোপুরি মিথ্যা। এটি নাকি এরিয়া ফিফটি ওয়ান এ ভিডিও করা হয়েছে। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে হারানোর জন্য আমেরিকা এ কাজটি করেছিল।
২০০৯ সালে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করেছে এমন একটি নভোযান সেটি থেকে তোলা ছবি স্পষ্ট প্রমাণ করে যে আসলে চাঁদের মানুষ নেমেছিল। সে ছবিতে কে লুনার ধ্বংসাবশেষ, পায়ের ছাপ, পতাকার ছায়া ইত্যাদি দেখা গেছে।
কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থেকেই যায় চাঁদে মানুষ প্রথম পা রাখেন ১৯৬৯ সালে কিন্তু আজ ২০২০। তখনকার প্রযুক্তি থেকে এখনকার প্রতি অনেক উন্নত। তখনই যদি মানুষ চাঁদে যেতে পারতো তাহলে এখন পর্যন্ত চাঁদে আর কেউ কেন যায়নি?
আমরা এক রহস্যের মধ্যে আছি। চাঁদের যাওয়ার ঘটনাটি একদিকে যেমন সত্য আবার অন্যদিকে এটিকে মিথ্যা বলে প্রমাণ করতে ও বেশিবসময় লাগে না। আশাকরি কোন একদিন এটির সমাধান হবে। চাঁদে যাওয়ার ঘটনা সত্য বলে প্রমাণিত হবে অথবা মিথ্যা।
৯) রহস্যময় পিরামিড
পীরামিডের অবস্থান :
পিরামিড তৈরীর কারণ :
কীভাবে পিরামিড তৈরি করা হতো
মিশরে প্রায় ১৩৮ টি পিরামিডের সন্ধান পাওয়া গেছে । সবচেয়ে বড় পিরামিডটি হচ্ছে গিজা মালভূমি তে অবস্থিত খুফু’র পিরামিড । এটি প্রায় ৪৭০০ বছর পূর্বে নির্মিত । এর আয়তন প্রায় ৬ টি ফুটবল মাঠের সমান এবং উচ্চতায় ৪২ তলা উঁচু বিল্ডিং এর সমান সমান উঁচু । এই পিরামিডটি প্রায় ২০ লক্ষ পাথরের ব্লক দ্বারা তৈরি । প্রতিটি ব্লক ওজনে প্রায় ২.৫ থেকে ৫০ টন । পিরামিডটিতে বাইরের দেয়াল ছিল চুনাপাথরের ব্লক দিয়ে তৈরি আর ভেতরের দেয়াল গ্রানাইটের ব্লক দিয়ে তৈরি । এর ভেতরে তিনটি চেম্বার রয়েছে। কেন্দ্রীয় চেম্বারে মমি থাকে। কেন্দ্রীয় চেম্বারে ঢুকতে প্রায় দেড়শ ফুট সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে হয় ।
এই পাথরের ব্লকগুলো বাইরে থেকে আনতে হয়েছে ; ধারণা করা হয় প্রায় ৫০০ মাইল দূর থেকে । কিন্তু এগুলো মরুভূমির ভিতর কিভাবে আনা হয়েছে তা নিয়ে বিস্ময়ের শেষ নেই । বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্রেন দিয়ে সর্বোচ্চ ১০ টন ওজন ৫০ থেকে ১০০ মিটার উপরে তোলা যায় । কিন্তু তখনকার সময়ে এত ওজনের পাথরের ব্লক কিভাবে উপরে তোলা হয়েছিল তাও বিস্ময়কর। যেভাবে পাথরের ব্লকগুলো যেভাবে কেটে আরেকটির সাথে জোড়া লাগানো হয়েছে তা ছিল একদম নিখুঁত ; বর্তমানের ইঞ্জিনিয়ারিং কলা-কৌশল কেও হার মানায়। তখনকার সময়ে পাথরগুলো যেভাবে কাটা হয়েছিল বর্তমানে একইভাবে পাথরকাটা হয় ।
মমী তৈরির পদ্ধতি :
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের অবস্থান
এই অঞ্চলটি যে একদম ঠিকঠাক আটলান্টিক মহাসাগর কোথায় অবস্থিত তা নিয়ে অনেক মতভেদ আছে । একদল গবেষকদের মতে এই অঞ্চলটির এক প্রান্ত হল পুয়ের্তো রিকো আরেক প্রান্ত আছে যুক্তরাষ্ট্রের বাহমা ও ফ্লোরিডার দক্ষিণাংশ আর অন্য প্রান্ত হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারমুডা দ্বীপপুঞ্জ। কেউ কেউ আবার এ জায়গার সাথে মেক্সিকো উপসাগর যুক্ত আছে বলে মনে করেন । আবার অনেকের কাছে এটা ত্রিভুজ আকৃতির নয় বরং ট্রাপিজিয়াম আকৃতির ।
আরো দেখুনঃ থানা এবং উপজেলার মধ্যে পার্থক্য কী ?
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের আবিষ্কার :
পঞ্চদশ শতকে ক্রিস্টোফার কলম্বাস যখন ইউরোপ থেকে আমেরিকায় যান তখনই তিনি সাগরে অদ্ভুত এলাকা লক্ষ করেন । ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায় ১৪৯২ সালের ১১ ই অক্টোবর এই জায়গাটি নিয়ে তিনি অদ্ভুত কিছু অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলেন । তিনি লিখেছেন তার জাহাজের নাবিকরা দূর থেকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের অঞ্চলের দিকে আলোর নাচানাচি আর আকাশে ধোয়া দেখেছিল। আর তার কম্পাস এলোমেলো ছোটাছুটি করছিল । অদ্ভুত এই জায়গাটি প্রায় ৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত জুড়ে রয়েছে ।
যদিও এই অঞ্চলের আবিষ্কারক কলম্বাস তবে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন লেখক ভিনসিয়েন্ট গ্যাডিস তার লেখা একটি কাহিনীতে ১৯৬৪ সালে । ১৯৫০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরে আটলান্টিক মহাসাগরের নামহীন এক অদ্ভুত এলাকা নিয়ে একটি রিপোর্ট ছাপা হয় । আর এই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই গ্যাডীস লিখেছিল ” The Deadly Bermuda Triangle ” নামক কাহিনীটি।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে চিন্তাভাবনা :
এই বারমুডা ট্রাইঅ্যাঙ্গেল নিয়ে মানুষের মানুষের মনে চিন্তা ভাবনার কোন শেষ নেই । অনেকে মনে করে যে এখানে অতিপ্রাকৃত কোন শক্তি রয়েছে । আবার অনেকে মনে করে এই অঞ্চলটিতে ভিনগ্রহের প্রাণীর বসবাস রয়েছে । এখানে যে দুর্ঘটনা গুলি ঘটে সেগুলো নাকি তারাই ঘটায় । যে জাহাজ উড়োজাহাজ উধাও হয়ে যায় সেগুলোর পিছনে নাকি তারাই দায়ী । অনেকে মনে করে এই অঞ্চলে একবার যারা যায় তারা আর ফিরে আসে না । আর যারা ফিরে আসে তারাও তারাও পরবর্তীতে কোনো দুর্ঘটনার শিকার হয় । আবাার অনেকে মনে করেন যে এই অঞ্চলেে শক্তিশালী চৌম্বক রয়েছে যা সবকিছুকে আকর্ষণ করে । এর ফলে জাহাজ ও বিমান গুলো হারিয়ে যায় । আবার অনেকে মনে করেন এই অঞ্চলে ওয়ার্ম হোল আছে যা জাহাজ ও বিমান সবকিছুকে টেনে নেয় । এই অঞ্চল নিয়ে যে শুধু আজগুবি চিন্তা ভাবনা করে তাই না অনেকে আবার এটিকে কিছুই মনে করে না । অনেকে মনে করে যে এখানে কিছুই নেই সব ভ্রান্ত ধারণা ।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য :
যখনই কোন বিমান বা জাহাজ বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে গিয়েছে তখন সেগুলো কিভাবে যেন হারিয়ে যায় কিংবা সেখান থেকে যদিও ফিরে আসে তবু মুখোমুখি হয় অদ্ভুত সব ঘটনার । এসব ঘটনার কারণ এই রহস্য যেন আরো গভীর হয়ে উঠেছে ।
মারি সেলেস্ত নামের একটি মালবাহী জাহাজ ১৮৭২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে নিউইয়র্ক থেকে রওনা হয় । অনেকদিন পর যখন গন্তব্যে পৌঁছয় নি তখন শুরু হয় খোঁজাখুঁজি । অনেক চেষ্টার পর জাহাজটিকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এলাকায় খুঁজে পাওয়া গেল । ভাসমান অবস্থায় কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল যে সব মালপত্র খাবার-দাবার একদম অক্ষত ছিল শুধুমাত্র ১১ জন কর্মী উধাও। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন সরকার ব্রিটিশদের সাহায্য করার জন্য ইউএসএস সাইক্লোপস নামক একটি জাহাজ পাঠায় । ১৯১৮ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে জাহাজটি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কাছে এসে কোন চিহ্ন না রেখে উধাও হয়ে যায় । এর সাথে ৩০৬ জন ক্রু উধাও হয়ে যায় ।
ঠিক একইভাবে একই জায়গা থেকে ১৯৪১ সালে গায়েব হয়ে যায় ইউএসএস প্রটিয়াস আর ইউএসএস নিরিয়াস নামের দুটি জাহাজ ।
তবে জাহাজের ঘটনাগুলোর মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো মেরিন সালফার কুইন নামক জাহাজ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি । ১৫ হাজার টন সালফার আর ৩৯ জন ক্রু নিয়ে ১৯৩৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তে রওনা হয় জাহাজটি । ফেব্রুয়ারি ৪ থেকে জাহাজটি যখন বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের অবস্থান করছিল হঠাৎ রেডিও ট্রানস্মিশন অফ হয়ে যায় অথচ কিছুক্ষণ আগেও কমাণ্ডার বলেছিলেন ” কত সুন্দর আবহাওয়া ! কি চমৎকার ভাবে নেভিগেশন চলছে ! ” এভাবে হঠাৎ ৬০০ ফুটের এই জাহাজটি মানুষগুলোকে নিয়ে একদম নেই হয়ে গেল ।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের সমস্যার সমাধান :
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল রহস্য সমাধানের জন্য অনেক বিজ্ঞানীই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে । প্রচুর গবেষণার পর ২০১৬ সালের ৪ মার্চ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করে যার তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৩০০ টি জাহাজ আর ৭৫ টির মত বিমান নিখোঁজ হয় বারমুন্ডা ট্রায়াঙ্গেলে । অনেকে করেন যে এসব ঘটনার পেছনে অতিপ্রাকৃত কোন কারণ নেই বরং বৈরী আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে । আমেরিকা , ইউরোপ , আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে চলাচলের জন্য বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল পথেই পড়ে । প্রায় প্রতিদিন অনেক জাহাজ আর বিমানকে ওই পথ পাড়ি দিতে হয় । আর বেশি চলাচলের জন্য দুর্ঘটনার খবর গুলো একটু বেশি শোনা যায় ।
ওই অঞ্চলে কম্পাস কাটা চুম্বকীয় উত্তর মেরু নির্দেশ করে যা ভৌগোলিক উত্তর মেরু থেকে প্রায় ১১০০ মাইল দূরে । ক্যারিবীয় অঞ্চলে এই পার্থক্য কম্পাস কাটায় প্রায় ২০ ডিগ্রি। জাহাজ বা এরো প্লেন চালানোর সময় এই পার্থক্য হিসেবে রাখা হয় যদি কোনো কারণে ভুল হয় তাহলে নানা বিভ্রাট লাগতে পারে ।
জানা গেছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের অনেক অংশ জুড়ে থাকে ষড়ভুজ আকৃতির মেঘ এবং কোন মেঘ প্রায় ৫৫ থেকে ৭৫ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত । আর এখানকার বায়ুর গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় 170 মাইল । আর এ সবই হলো জাহাজ আর বিমান দুর্ঘটনার কারণ । আর এ অঞ্চলে প্রায়ই টর্নেডোর উৎপত্তি হয় । আবার অনেকে মনে করেন মিথেন হাইড্রেট গ্যাস এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে । এই মহাসাগরের তলদেশে থেকে উৎপন্ন হওয়া মিথেন হাইড্রেট গ্যাস পানির ঘনত্ব কমিয়ে দেয় । ফলে কিছু বুঝে উঠার আগেই জাহাজ ডুবে যায় ।
এরপর ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত হয় Larry kusche এর ” The Bermuda Triangle Mystry : Solved ” বইটি । যুক্তিতে ভরপুর এই বইটিতে দেখানো হয়েছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে বেশিরভাগ গল্পই ভুয়া এবং অতিরঞ্জিত । প্রমান সহকারে লেখক দেখান যে বেশিরভাগ পথদুর্ঘটনাই আসলে সেখানে নয় বরং অন্য কোথাও ঘটেছে আর তা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে । ট্রপিক্যাল সাইক্লোন প্রবণ অঞ্চলের জাহাজডুবিতে স্বাভাবিক ঘটনা ।
উপরে উল্লেখিত যে সব রহস্যের কথা শোনা যায় তার অনেকগুলোরই কিন্তু সমাধান হয়েছে ।
ফ্লাইট নাইনটিন এর তদন্তে দেখা গেছে রেডিও ট্রানস্মিশন অফ হওয়ার আগে পাইলট বলেছিলেন কম্পাস কাজ করছে না। কোথায় আছি বুঝতে পারছি না সম্ভবত ফ্লোরিডা । এই জিপিএস হীন যুগে একবার পথ হারালে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব । জ্বালানি শেষ হলে তো কথাই নেই । এই ছিল ফ্লাইট নাইনটিন এর নিখোঁজ হওয়ার রহস্য।
মেরিন সালফার কুইন জাহাজের কাঠামো খুবই দুর্বল ছিল । এজন্য এটি দুর্ঘটনায় পড়ে।
এখন আসি অমীমাংসিত ক্যাম্পাসের কম্পাসের এলোমেলো ঘোরা নিয়ে। ধারণা করা হয় যে ওই এলাকায় ম্যাগনেটিক এনোমালি বা চুম্বকীয় শৃঙ্খলা আছে সে কারণে কম্পাস এরকম আচরণ করে । এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে কম্পাস থেকে চুম্বক মেরুর দূরত্বের উপর ভিত্তি করে এর দিক নির্দেশনায় বিচ্যুতি আসে । একজন দক্ষ পথ প্রদর্শকের এই কথা জানা থাকার কথা । কিন্তু সমস্যা হলো সাধারণ মানুষকে নিয়ে যারা এই বিষয়ে কিছুই জানে না ।
মেরিন বীমা কোম্পানি Lloyd’s of London দেখেছে যে এই ত্রিভুজে অন্য সমুদ্রের চেয়েও উল্লেখ করবার মতো ভয়ঙ্কর কিছু নেই । যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড লেখকদের বর্ণনার উপর ব্যাপক অনুসন্ধানের পর অনুমোদন করেছে এই অঞ্চলে অস্বাভাবিক কিছু নেই । উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ১৯৭২ সালে ভি. এ. ফগ নামের একটি ট্যাংকার মেক্সিকো উপসাগরে বিস্ফোরণের পর ডুবে যায় । কোস্টগার্ডরা সে বিধ্বস্ত ট্যাঙ্কারের ছবি তুলেন এবং বেশ কিছু মৃতদেহ উদ্ধার করেন । কিন্তু কিছু কতিপয় লেখক বলেছেন ট্যাংকারের সব আরোহী অদৃশ্য হয়ে গেছে শুধুমাত্র ক্যাপ্টেন কে তার কেবিনে টেবিলে হাতে কফির মগ ধরা অবস্থায় পাওয়া গেছে । টিভি সিরিয়াল NOVA/Horizon এর ” দ্যা কেস অব দা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল (১৯৭৬/০৬/২৭) পর্বে বলা হয়েছিল, যে সব দুর্ঘটনার কথা বলা হয় সেগুলো ভিত্তিহীন । সংশয়বাদী গবেষকগণ যেমন Ernest Taves এবং Barry Singer দেখিয়েছেন যে মিথ্যে রহস্য তৈরি করা বেশ লাভজনক। কারণ তখন ওই মিথ্যে রহস্য এর উপর ভিত্তি করে বই লিখে বা টিভিতে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে প্রচুর অর্থ কামানো যায় । (সূত্র : উইকিপিডিয়া)
অনেকে মনে করে থাকেন যে এই অঞ্চল জলদস্যু প্রবণ । জলদস্যুরা আলো জ্বেলে জাহাজের নাবিকদের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করত । তারা ভুলবশত জলদস্যুদের আলোর ফাঁদে পড়ে ওই দিকে যেতে এবং ডুবোপাহারের সাথে ধাক্কা খেয়ে জাহাজটি ডুবে যেত এবং ধন-সম্পদ ও মালপত্র সব ভেসে যেত। দস্যুরা পরে সেগুলো সংগ্রহ করতো । আবার অনেক জলদস্যু পরিকল্পিতভাবে জাহাজ লুট করতো এবং পরে জাহাজগুলোকে ডুবিয়ে দিত । ফলে অনেকে মনে করত জাহাজগুলো হারিয়ে গেছে ।
অনেক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল কোন রহস্য নেই । যদি তাই হতো তাহলে ওই এলাকা দিয়ে চলাচল কারী জাহাজ উড়োজাহাজ এর বীমার হার অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি হতো । অথচ সেখানে বাড়তি বীমা আরোপ করা হয় না । বীমা কোম্পানিগুলোর যা হিসেবে তাতে রহস্যের সন্ধান পেলে আর অবশ্যই বীমার হার বাড়িয়ে ধরত ।
শেষ কথা :
পৃথিবী সৃষ্টির রহস্যই আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় রহস্য । প্রকৃতিতে ছড়িয়ে রয়েছে হাজার হাজার রহস্য । কিছু রহস্য আমাদের সম্মুখে এসেছে, অনেক এখনো হয়তো আড়ালে রয়ে গেছে। একযুগে আবিষ্কৃত রহস্য অন্য যুগে হয়তো সমাধান করতে পেরেছে। কিন্তু প্রকৃতি তার নতুন নতুন রহস্য আমাদের সামনে এনে মাথা উচু করে বলে দেয়, তোমরা আমার রহস্য কি শেষ করতে পারবে? অমীমাংসিত হাজারো রহস্য আমার কাছে রয়েছে ।
একবিংশ শতাব্দির মানুষ হিসেবে আমরা সবকিছুতেই প্রমাণ খুঁজি, এটা করাই উচিৎ। কিন্তু প্রকৃতির সকল অমীমাংসিত রহস্য যেদিন সমাধান পাবে, সেদিন হয়তো পৃথিবীই ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রকৃতিকে রহস্যময় বলেই এতো বেশি সুন্দর।
Fine
যি, বেশ রহস্যময় ঘটনাই ছিল
ধন্যবাদ