বাঙালী জাতীর জন্য বাংলা নববর্ষ উদযাপন একটি ঐতিহ্য হিসেবে পরিচিত। এই দিনটি বাঙালী সংস্কৃতির সহিত ওতোপ্রতু ভাবে জড়িত। নববর্ষের দিনটি পুরাতন বছরের বিদায়ের ঘন্টা এবং নতুন বছরের আগমন বার্তা নির্দেশ করে। এ দিনটিতে বিগত বৎসরের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হতাশা-নিরাশাকে বিলীন করে এবং অনিশ্চিত সম্ভাবনার আশাকে স্বাগত জানিয়ে শুরু হয় নতুন বছরের পথচলা। বাঙালী কৃষ্টির অংশ হিসাবে এই দিনকে উপলক্ষ করে বাংলার হাটে-মাঠে-প্রান্তরে, গ্রামে-গঞ্জে, শহর-বন্দরে বর্ণিল আয়োজনে মুখরিত এক পরিবেশ ধারন করে।
বাংলা নববর্ষকে সার্বজনীন উৎসব বলা হয় কেন?
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের নেতৃত্বে ১৯৭০ সালের ১২ ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় “নবান্ন প্রদর্শনী” এই প্রদর্শণী সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা জাগিয়ে ছিল। জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই এই উৎসবটি পালন করেছিল। পরবর্তী সময়ে এর আনুষ্ঠানিকতায় কিছুটা পরিবর্তন হয়, যার বর্তমান রূপ পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠান।
বর্তমানে নিয়মিতভাবেই বাংলা নববর্ষ বিপুল আগ্রহ উদ্দীপনা নিয়ে সারাদেশের মানুষ পালন করে যাচ্ছে। বাংলা নববর্ষ উৎসবটি বাঙালীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক। এই উৎসবটি বাঙালীকে নিজ দেশ ও জাতির প্রতি ভালবাসা, সহযোগিতা ও সহমর্মিতায় অনুপ্রাণিত করে যাচ্ছে যা বাঙালীর জন্য এক গৌরব। এছাড়া এ উৎসবটি সমস্ত বাঙালী জাতির ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল ভেদাভেদ ভুলে পালন করে সেজন্য এই উৎসবটিকে সার্বজনীন উৎসব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
বাংলা নববর্ষ যেভাবে উদযাপন করা হয়–
আমরা জানি, বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। দু’মাসে একটি করে বারটি মাসে মোট ছয়টি ঋতু। সর্বশেষ বসন্ত ঋতুর পর সময় পরিক্রমায় আবারো আসে গ্রীষ্ম ঋতু। বৈশাখ ও জৈষ্ট্য মাস মিলিয়েই এ ঋতু। চৈত্র মাসের শেষ দিনটিতে পূর্ববর্তী বছরকে বিদায় জানিয়ে বৈশাখের প্রথম দিনকেই বাংলা দিনপুঞ্জিকা অনুযায়ী পহেলা বৈশাখকে বাংলা নববর্ষ হিসেবে বরণ করা হয়। তাছাড়াও নববর্ষের সাথে যুক্ত রয়েছে ফসল বোনার আনুষ্ঠানিকতা ও ব্যবসায়ীদের হালখাতা অনুষ্ঠান। পহেলা বৈশাখের উদযাপনের মধ্য দিয়েই বাঙালি হৃদয়ে নতুন করে সৃষ্টি হয় বিভিন্ন অনুপ্রেরণা।
আরো পড়ুন: ভূমিকম্প কেন হয়? ভূমিকম্পে কী করণীয়
বলাবাহুল্য ভারতবর্ষের মোগল সম্রাট আকবরের সিংহাসনে আরোহণ করার দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য আমির ফতেউল্লা সিরাজী প্রথম পহেলা বৈশাখকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষনা দেন। এর মধ্য দিয়েই বাঙালী জাতিরা তাদের চাষাবাদের খাজনা পরিশোধ, বছরের হিসাব, বিয়ের তারিখ নির্ধারণ সবকিছুই বাংলা নব বর্ষপঞ্জী অনুসারে করে আসছে।
এরপর থেকেই এদেশের মানুষ তাদের চাষাবাদের খাজনা পরিশোধ, বছরের হিসাব, বিয়ের তারিখ নির্ধারণ সবকিছুই বাংলা নব বর্ষপঞ্জী অনুসারে করে আসছে। এদিন দোকানিরা বাকি বকেয়া সব হিসাব-নিকাশ পরিশোধের মাধ্যমে ছোট বড় অনুষ্ঠান করে দিনটি উদযাপন করে।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্য করে সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখ মাস জুড়ে ছোট-বড় নানাবিধ মেলা বসে। এসব মেলাসমুহে মানুষের নানান বিচিত্রময় উপকরণ নিয়ে চিত্তবিনোদন করা হয়ে থাকে। তাই এ নববর্ষ উৎসবকে আমরা সকলেই যথাযথ উদযাপনের মধ্য দিয়েই আমাদের বরণ করে নেওয়া উচিত।