সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ হল এক ধরনের জলযান বা ওয়াটার ক্রাফট। এটি পানির উপরে ও নিচে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে। এটি খুব সহজে সমুদ্রের গভীরে চলে যেতে পারে আবার সমুদ্রের গভীরতা মাপতে পারে। এটি লুকিয়ে থেকে খুব সহজেই শত্রুর উপর আক্রমণও করতে পারে।
ডুবোজাহাজ (সাবমেরিন) |
সাবমেরিন কিভাবে কাজ করে
দৈত্যাকার শরীর নিয়ে পানির নিচে দিব্যি ঘুরে বেড়াতে পারে কে আর, সে তো নীল তিমিই । কিন্তু না, তার চেয়ে কোনো অংশে কম যায় না পানির নিচের দৈত্য–খ্যাত সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ । নিজের পেটের ভিতর অনেক মানুষ ঢুকিয়ে সাগর সাঁতরে বেড়ায়।
সাবমেরিন মূলত কাজ করে প্রাচীন গ্রিক বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের প্লবতার সূত্র অনুযায়ী ballast tank থিওরির উপর ভিত্তি করে । এই থিওরির উপর ভিত্তি করে ড্রেভল ডুবোজাহাজ আবিষ্কার করেন । ডুবোজাহাজকে ভাসানো ও ডুবানো হয় পানির ওজন বাড়ানো কমানোর সাহায্যে ।
উদাহরণস্বরূপ: একটা বোতলের ভেতর যখন বাতাস থাকে, তা কিন্তু পানিতে ভাসে । আবার বোতলে ভেতর পানি ভরা হলে তা ডুবে যাবে। অতএব, বোতলের ভেতর যদি কোন সিস্টেমে পানি অপসারিত করে বাতাস ঢোকানো যায়, তাহলে বোতলটা আবার পানিতে ভেসে উঠবে ।
প্রতিটি ডুবোজাহাজেই থাকে ব্যালাস্ট ট্যাংক। এই ট্যাংকের মাধ্যমেই সাবমেরিন ভাসে আর ডুবে যায়। ব্যালাস্ট ট্যাংকটি যখন বাতাসে ভর্তি থাকে তখন সাবমেরিন পানিতে ভাসমান থাকে । এটির নিচে আর ওপরে দুটি ভাল্ব থাকে । যখনই নিচে যাওয়ার দরকার পড়ে, নিচের ভাল্বটি খুলে দেওয়া হয়। এতে ভেতরে পানি ঢুকে ওজন বেড়ে যায় । অন্যদিকে ওপরের ভাল্ব দিয়ে বাতাস বের হয়ে যায়। এভাবে ডুবোযানটি পানির নিচে চলে যায় । ফের যখন ওপরে ওঠার প্রয়োজন পড়ে তখন ব্যালাস্ট ট্যাংকটির পানি বের করে দিয়ে ট্যাংকটি বাতাসে পূর্ণ করে দেওয়া হয় । ব্যস, ভুস করে আবার ভেসে ওঠে।সাবমেরিনের পেছনে প্রপেলার থাকার কারণে এটি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
নাবিকরা অক্সিজেন কোথায় পায়
প্রতিটি সাবমেরিনেই কিন্তু যাত্রীদের অক্সিজেন উৎপাদন এবং কার্বন ডাই–অক্সাইড বের করে দেওয়ার প্রযুক্তি থাকে। এটা না হলে তো কেউ শ্বাস–প্রশ্বাসই নিতে পারবে না।
>>সাবমেরিনের ভেতরে অক্সিজেনের যোগান দেয় অক্সিজেন জেনারেটর, যা ইলেকট্রোলাইসিস প্রক্রিয়ায় কাজ করে।
>>কার্বন–ডাই–অক্সাইডকে সোডা লাইম হিসেবে কেমিক্যাল প্রশমিত করে বের করে দেওয়া হয়।
>>বিশুদ্ধ পানি সরবারহ করা হয় বাষ্পীভবনের মাধ্যমে।
বাংলাদেশের সাবমেরিন
২০১৬ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে প্রথম সাবমেরিন যুক্ত হয়। ‘নবযাত্রা’ ও ‘জয়যাত্রা’—দুটি সাবমেরিন শত্রুপক্ষের যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনকে আক্রমণ করতে সক্ষম।
“ছবি সূত্র: বাংলা উইকিপিডিয়া“