অন্ধকারে আমরা দেখতে পাই না কেন?

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে “অন্ধকার ঘরে সাপ, তো সারা ঘরেই সাপ”। অন্ধকারে মানুষের দেখতে না পাওয়াই মূলত এই প্রবাদের উৎপত্তির কারণ। কিন্তু প্রশ্ন হলো অন্ধকারে আমরা দেখতে পাই না কেন? অনেক প্রাণীই তো রাতের অন্ধকারে দেখতে পায়, তাহলে মানুষ কেন অন্ধকারে চোখে কিছুই দেখতে পায় না?
এসকল প্রশ্নের উত্তর আমরা অবশ্যই জানবো। কিন্তু তার আগে যে বিষয়ে আমাদের এতো এতো প্রশ্ন অর্থাৎ অন্ধকার, তাকে নিয়ে একটু জেনে নেওয়া যাক!

অন্ধকার বলে আসলে কিছু নেই। অন্ধকারেও আলো থাকে, কিন্তু মানুষের চোখে তা দৃশ্যমান নয়। অর্থাৎ দৃশ্যমান আলো অনুপস্থিত থাকলে সেই অবস্থাকেই আমরা অন্ধকার বলে জানি।

অন্ধকার বলতে সাধারনত দৃশ্যমান আলোর অনুপস্থিতিকেই বোঝায়। রঙের জগতে এটাকে কালো বলে। (তথ্যসূত্র – উইকিপিডিয়া)

কিন্তু অন্ধকারে আমরা দেখতে পাই না কেন, সে বিষয়ে জেনে নেওয়া যাকঃ

 

আমরা কোনো বস্তু কখন দেখতে পাই?

আমাদের চোখে দুটি স্পেশাল কোষ থাকে যথা: ১) কোন কোষ এবং ২) রড কোষ।
 
কোন কোষগুলি অধিক আলোতে বা রঙিন বস্তু দেখার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে এবং রড কোষগুলো সাদা কালো বস্তু এবং কম আলোতে দেখার কাজ করে।  
 
কোনো বস্তুর উপর যখন আলো পড়ে এবং প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে তখন আমাদের চোখের লেন্স, রেটিনা, মানুষের দ্বিতীয় করোটিক স্নায়ু (cranial nerve) বা দর্শন স্নায়ুর মাধ্যমে চোখ থেকে আলোক-সংবেদ মস্তিষ্কে পৌঁছালে আমরা বস্তুটির উপস্থিতি উপলব্ধি করি আর এই উপলব্ধিই হল কোনকিছু দেখা। 
 
কাজেই কিছু দেখতে হলে চোখ বাদে যে দুটি আবশ্যক জিনিস প্রয়োজন তা হলো বস্তু এবং আলো। 

অন্ধকারে আমরা দেখতে পাই না কেন?

দৃশ্যমান আলো
চিত্র: আলোক-বর্ণালী

উপরের চিত্রটি খেয়াল করুন। বেগুনী রঙ থেকে লাল রঙের আলো অর্থাৎ ৪০০ থেকে ৭০০ ন্যানো-মিটার পর্যন্ত ছোট এই ৩০০ ন্যানোমিটার বিস্তৃত তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোটুকুই শুধুমাত্র মানুষ দেখতে পায়।

বিশ্বাস করতে পারছেন না নিশ্চয়ই, আপনি হয়তো ভাবছেন আমি তো সব ই দেখি, তাহলে আপনি এমন সীমাবদ্ধতা দেখাচ্ছেন কেন? না, আপনি আসলেই সবকিছু খালি চোখে দেখেন না।

আপনার বাসার মাইক্রোওভেনে যে খাবার গরম করেন, সেটিও একধরনের আলো। কিন্তু আপনি কি কখনো এই আলো দেখতে পান?

আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। আমাদের সবার বাসাতেই টিভি রিমোট রয়েছে। টিভি রিমোটের সামেনে একটি বাল্ব দেওয়া থাকে, কিন্তু কখনো এই বাল্ব জ্বলতে দেখেছেন?

দেখেন নি কারণ মানুষের খালি চোখে এই আলো দেখার মতো কোষ নেই। মোবাইলের ভিডিও রেকর্ডিং অন করে রিমোটে চাপ দিন। এরপর রেকর্ড চালু করে দেখুন তো, আলোটি দেখতে পান কি না!

আমরা যদি এক্সরে রশ্মি দেখতে পেতাম, তবে আমার আপনার শরীরের ভিতরে কি আছে, সব দেখে নিতে পারতাম, যেমনটা আমরা এক্সরে রিপোর্টে দেখতে পাই।

তাহলে আমরা এটুকু বুঝলাম যে, আমাদের চোখে যে তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো দেখার ক্ষমতা রয়েছে, তার চেয়ে বেশি আমরা দেখতে পাবনা।

এবার আমাদের প্রশ্ন হলো, অন্ধকারকে কালো রঙের দেখি, এবং অন্ধকারে আমরা দেখতে পাই না কেন??

অন্ধকারে-আমরা-দেখতে-পাই-না-কেন

 

উপরের চিত্রটি দেখলে বুঝতে পারবেন, কোনো বস্তু দেখার জন্য আলোক উৎস এর কোনো বিকল্প নেই। এখান থেকেই উত্তর পাওয়া যায় যে, অন্ধকারে আমরা দেখতে পাই না কেন।
কোনো বস্তু দেখার জন্য বস্তুর উপর আলো পড়তে হয়, এজন্য প্রয়োজন আলোর উৎস। কিন্তু অন্ধকার এমন এক পরিবেশ যেখানে আলো উপস্থিত নয়।
তাই বস্তুর প্রতিবিম্ব তৈরির জন্য আমাদের চোখে কোনো প্রতিফলন পৌঁছাতে পারেনা। তাই কোনো বস্তু দেখার প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হতে পারেনা। যার কারণে আমরা অন্ধকারে দেখতে পাই না।
এছাড়া, আমরা পূর্বে যেমনটা বলেছি, মানুষের চোখে স্বল্প আলো এবং অধিক আলোতে দেখার মতো দুই ধরনের কোষ যথা: রড কোষ ও কোন কোষ রয়েছে।
কিন্তু আলোর অনুপস্থিতিতে দেখার মতো কোনো কোষ নেই। প্রশ্ন করতে পারেন অন্যান্য প্রাণীর কথা বললেন শুরুতে যে দেখতে পায়, আমিও জানি বিড়াল দেখতে পায়, তাহলে বিড়ালের কি অন্ধকারে দেখার মতো কোষ আছে? বিড়াল অন্ধকারে দেখতে পায় কিভাবে?
এটি আমাদের ভুল ধারণা ছাড়া আর কিছুই নয়, অন্য প্রাণি কিংবা বিড়ালও আমাদের মতোই অন্ধকারে দেখতে পায়না। তবে তাদের চোখের গঠন এবং মাথার তুলনায় চোখের আকার বড় হওয়ার কারণে স্বল্প আলোতে মানুষের চেয়ে বিড়াল বেশি ভালো দেখে। আশাকরি, সকলেই বুঝতে পেরেছেন যে, অন্ধকারে আমরা দেখতে পাই না কেন?

Leave a Comment