পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের মাত্র ২১% অক্সিজেন পুরো পৃখিবীর শুধু সকল জীবকেই বাঁচিয়ে রাখছে না, সেইসাথে জড়বস্তুকেও তার অবস্থানে টিকে থাকতে সাহায্য করছে। কখনো ভেবে দেখেছেন কি, যদি কখনো পৃথিবী অক্সিজেন শূন্য হয়ে যায়, বা মাত্র ৫ সেকেন্ড পৃথিবীতে অক্সিজেন না থাকে, তবে পৃথিবীর কি অবস্থা হবে?
পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের ৭৮ ভাগই নাইট্রোজেন, আর মাত্র ২১ ভাগ অক্সিজেন। কিন্তু বায়ুমন্ডলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু অক্সিজেনই। অক্সিজেন ছাড়া কোন জীব, জড়, পানি এমনকি মানুষও নিজস্ব অবস্থানে থাকতো না।
আপনি হয়তো বলবেন, অনেক মানুষ তো ১-২ মিনিটও অক্সিজেন ছাড়া বাঁচতে পারে, ৫ সেকেন্ড অক্সিজেন অনুপস্থিত থাকলে আর কি হবে! কিন্তু না, পৃথিবীতে শুধু তো মানুষ নেই, আরো অনেক কিছু রয়েছে। আশ্চর্য্যজনক হলেও সত্যি যে মাত্র ৫ সেকেন্ড যদি পৃথিবী অক্সিজেন শূণ্য হয়, তবে উল্কার মত খসে খসে পড়বে আকাশে উড়তে থাকা প্লেন, ভেঙ্গে পড়বে কংক্রিটের স্থাপনা, ঘটে যাবে পরিবেশের ভয়ঙ্কর বিপর্যয়।
পৃথিবী সেকেন্ডর জন্য অক্সিজেন শুন্য হয়ে যায় |
পৃথিবী অক্সিজেন শুন্য হয়ে গেলে কি কি ঘটবে?
যদি পাঁচ সেকেন্ডর জন্য পৃথিবী অক্সিজেন শূণ্য হয় তবে পাল্টে যাবে পুরো পৃথিবীর চিত্র। অক্সিজেন না থাকলে কংক্রিটের সকল স্থাপনাই ভেঙ্গে পড়বে। কেননা, কংক্রিটকে জমাটবদ্ধ রাখতে অক্সিজেন বিশেষ ভূমিকা পলন করে। তাই অক্সিজেন ছাড়া কংক্রিট ধুলায় পরিণত হবে।
একটি ভবনে বিভিন্ন ধরণের অপরিশোধিত ধাতু থাকে। অক্সিডেশনের প্রলেপের কারণে ধাতুগুলোকে আলাদা রাখা সম্ভব হয়। কিন্তু অক্সিজেন শূণ্য হওয়ার সাথে সাথে একটি অন্যটির সাথে আটকে যাবে।
সূর্যের বিভিন্ন রশ্মির মাঝে আল্ট্রা-ভায়োলেট বা অতি-বেগুনি রশ্মি পৃথিবী এবং মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। আমাদের পৃথিবীতে অতি-বেগুনি রশ্মি আসতে বাধা দেয় ওজন স্তর, যা অক্সিজেন দিয়ে গঠিত। যদি পৃথিবী অক্সিজেন শূন্য হয়ে যায়, ওজন স্তর ভেঙ্গে পড়বে এবং পৃথিবীতে পৌছে যাবে ভয়ঙ্কর অতি-বেগুনি রশ্মি।
বাতাসে যে পরিমাণ চাপ থাকে, তার ২১ শতাংশ অক্সিজেনের। অক্সিজেনশূণ্য হয়ে গেলে বাতাসের চাপ হঠাৎ করে ২১% কমে যাবে। এই বিশাল চাপের পার্থক্যের কারণে আমাদের কানের শ্রবণস্তর ফেটে যাওয়ার সম্ভাবণা প্রবল।
অক্সিজেন নিজে জ্বলে না, কিন্তু অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে। তাই, অক্সিজেন ছাড়া গাড়ির জ্বালানি দহন থেমে যাবে। সড়কে আটকে যাবে গাড়ি, হয়তো চীনের সেই ভয়াবহ যানযটের চেয়েও বড় কোন যানযট তৈরি হবে। বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন না থাকলে উড়ন্ত বিমান চলা বন্ধ করে দিবে এবং আকস্মিকভাবে মাটিতে পড়ে যাবে।
সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌছানোর সময় বেশিরভাগ অংশ বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন উপাদানের সাথে বাধা পেয়ে প্রতিফলিত হয়, ফলে আকাশ আলোক উজ্জ্বল দেখা যায়। কিন্তু, অক্সিজেন অনুপস্থিত থাকলে ওজনস্তরের মতো এসবও হারিয়ে যেতে থাকবে। ফলে, সূর্য রশ্মি প্রতিফলিত না হওয়ায় আকাশকে আমরা অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখবো।
ভূত্বকের উপাদানের ৪৬ ভাগ অক্সিজেন। পৃথিবীর বায়ুমন্ডল অক্সিজেন শূন্য হয়ে পড়লে ভূত্বকের শক্ত আবরণও ভেঙ্গে পরতে পারে এবং ফলাফল স্বরূপ ভূমির উপরের সকল ভবন এবং স্থাপনা তার অবস্থান ঠিক রাখতে পারবেনা। ধসে পড়বে সকল দালান-কোঠা।
যদি পৃথিবীর অক্সিজেন মাত্র ৫ সেকেন্ডের জন্যও শূন্য হয়ে যায়, এরকম হাজারো বিপর্যয় হয়তো চলে আসবে। সহজেই অনুমান করা যায়, মাত্র পাঁচ সেকেন্ড অক্সিজেন না থাকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে পুরো পৃথিবী।
বর্তমান পৃথিবীতে অক্সিজেনের ক্রমহ্রাসমান ঘাটতি
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বায়ুমন্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে। দীর্ঘদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা মানুষকে বিশ্ব উষ্ণায়ন সম্পর্কে সতর্ক করেছিল। তবে তাদের সতর্কবার্তা বা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিশ্বজুড়ে গাছ কাটা ও নগরায়ন চলছে। এর ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বাড়ছে। ২০২১ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছিল, এই অক্সিজেনপূর্ণ পৃথিবী চিরস্থায়ী হবেনা। বরং আগামী কয়েক শতবর্ষের মধ্যেই বায়ুমণ্ডলে নাটকের পরিবর্তন দেখা দেবে।
বায়ুমণ্ডলের পাশাপাশি অক্সিজেনের পরিমাণ কমছে পৃথিবীর সমুদ্রগুলোতেও। গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৬০ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে সমুদ্র পানিতে প্রায় ২% অক্সিজেন কমেছে। এটি খুবই কম বলে মনে হলেও, বিশ্বব্যাপী পরিসংখ্যানে এটি ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
‘ডেড জোন’ নামে পরিচিত কিছু সামুদ্রিক এলাকায় আগে থেকেই অক্সিজেনের ঘাটতি ছিল। বর্তমানে সেসব এলাকাতেই প্রতি ১০ বছরে প্রায় ৪% হারে অক্সিজেন কমছে। সারা বিশ্বে বর্তমানে ৭০০ এরও বেশি সামুদ্রিক এলাকায় অক্সিজেন সল্পতা দেখা দিয়েছে, যাও ১৯৬০ এর দশকে ছিল মাত্র ৪৫টি। এরকম চলতে থাকলে খুব দ্রুতই বিশ্বব্যাপী অক্সিজেন সল্পতায় ভুগবে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী।
শেষকথা
উপরোক্ত আর্টিকেল থেকে আমরা জানতে পারলাম, অক্সিজেন ছাড়া পৃথিবীর অবস্থা কি হতে পারে। তাই এই মূল্যবান প্রাকৃতিক উপাদানটি সম্পর্কে আমাদেরকে আরও অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে। যেহেতু অক্সিজেন ছাড়া আমাদের জন্য মাত্র ১ মিনিটও বেচে থাকা প্রায় অসম্ভব। তাই আমাদের সকলেরই পরিবেশ দূষন থেকে দূরে থাকতে হবে। পাশাপাশি অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ানোর জন্য আমাদের কে বেশি বেশি গাছ লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
Good post. I certainly appreciate this website. Continue the good work!
বাহ, খুব ভাল পোস্ট। নতুন কিছু শিখলাম।
ধন্যবাদ