পতাকাটির মাঝের মানচিত্র বাংলাদেশের প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধাকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে অনুপ্রেরণা দিতো । আঞ্চলিকতা, ধর্ম, বর্ণ, গোত্রেরে কোন বৈষম্য বাধা হয়ে দাড়াতে পারতো না । পতাকায় অঙ্কিত সেই মানচিত্র পুরোটাকে স্বাধীন করতে হবে, পাকিস্তানিদের বাংলাদেশের প্রতিটি ইঞ্চি থেকে বিতারিত করতে হবে, এটাই ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের মনো-বাসনা । পতাকাটিকে মুক্তিযোদ্ধারা যখনই দেখতো, অন্যরকম অনুপ্রেরণা পেত । তারা বুঝতো, এই চিত্রের ভুখন্ডের প্রতিটি ইঞ্চি আমাদের । যখনই তারা মানচিত্রটি দেখতো তখনই তাদের কাছে স্বাধীনতার স্বপ্ন জাগ্রত হতো। তখন ঐ মানচিত্র না থাকলে পাতাকাটির কোনো বিশেষ মাহাত্ম থাকতো না কারো কাছে । মানচিত্রের কারনেই তখন মনে হয়েছে এটা বাংলাদেশের পতাকা ।
শিব নারায়ন দাসের অঙ্কিত পতাকাটির সবুজ অংশ বাংলার সবুজ প্রকৃতি বুঝালেও লাল অংশ শুধু সবুজের বুকে লাল সূর্য্য বুঝাতো ।
বাংলাদেশ যখন পাকিস্তানের পরাধীনতা থেকে মুক্ত হলো, স্বাধীনতার সূর্য্য বাংলার আকাশে উদিত হলো, তখন পতাকাটিকে আরো সরল করার উদ্দেশ্যে পতাকা থেকে চিত্রশিল্পী, নকশাকার কামরুল হাসান মানচিত্রটি বাদ দিয়ে দেন । মূলত সে সময় সঠিকভাবে বাংলাদেশের মানচিত্র অঙ্কিত পতাকার সংখ্যা ছিল কম, এবরো-থেবরো এবং ভুলভাবে মানচিত্র আঁকার সম্ভানণা তেকেই মানচিত্রটি বাদ দিয়ে দেওয়া হয় ।
কামরুল হাসানের ডিজাইন করা করা নতুন পতাকায় লাল অংশকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্যও পতাকাটিকে বাদ দেওয়া হয় । শিব নারায়ন দাসের অঙ্কিত পতাকাটির সবুজ অংশ বাংলার সবুজ প্রকৃতি বুঝালেও লাল অংশ শুধু সবুজের বুকে লাল সূর্য্য বুঝাতো । কামরুল হাসানের ডিজাইনকৃত বাংলাদেশের পতাকায় লাল রঙ লাল সূর্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার কর্তৃৃক গণহত্যায় সাধারন গণমানুষ ও যুদ্ধরত অবস্থায় বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধাদের সকল শহীদের তাজা রক্তকেও প্রকাশ করে ।
‘সবুজের বুকে লাল, সে তো উড়বেই চিরকাল’
শিব নারায়ন দাসের কথা এই প্রথম শুনলাম, আমরা এতদিন কামরুল হাসানের কথা জানতাম
অনেক মহান নায়ককেই আমরা ভুলে গেছি। তবে ইতিহাস কখনো সম্পূর্ণরূপে মুছে যায় না, কথাটা সত্য।