প্লাস্টিক সার্জারির ইতিহাস জানেন কি ?

” প্লাস্টিক সার্জারি ” এই নামটি প্রায় সবাই শুনে থাকবেন । বর্তমানে চিকিৎসা শাস্ত্রের একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য শাখা এই প্লাস্টিক সার্জারি । কিন্তু আপনারা জানেন কি আমরা সবথেকে বেশি ভুল করি এ প্লাস্টিক সার্জারি নিয়ে । প্লাস্টিক সার্জারির ভুল অর্থ করি ।
 
প্লাস্টিক সার্জারি কি ?

প্লাস্টিক শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ “প্লাস্টিকোস” থেকে যার অর্থ যেকোনো আকার-আকৃতিতে রূপান্তরের সক্ষম কোন কিছু কে বোঝায় । চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় প্লাস্টিক সার্জারি হচ্ছে দুর্ঘটনায় অথবা জন্মগতভাবে কোন শরীরের কোন অংশে ত্রুটি দেখা দিলে সেখানকার টিস্যু পুনর্গঠন এর মাধ্যমে সেই ত্রুটি দূর করা । 

        

কসমেটিক সার্জারি

প্লাস্টিক সার্জারি কিভাবে করা হয় ?

ক্ষতস্থানে শরীরের অন্যান্য ভালো অংশ থেকে চামড়া বা মাংসপিণ্ড এনে প্রতিস্থাপন করা হয় ।  এভাবে চিকিৎসার ফলে ক্ষতস্থানটি আবার আগের মত হয়ে যায়  । মনে করেন, শরীরের হাতের অনেকটা অংশ পুড়ে গেছে এবং হাতের ত্বক নষ্ট হয়ে গেছে । শরীরের অন্যান্য অংশ  থেকে চামড়া কেটে হাতে লাগিয়ে সার্জারি করা হয়  । এভাবে হাতে পুনরায় আগের মত হয়ে যায় ।

 প্লাস্টিক সার্জারির ইতিহাস


এ প্লাস্টিক সার্জারি আসলে নতুন কোন বিদ্যা নয় । ৮00 খ্রীষ্টপূর্বাব্দে ভারতীয় শল্য চিকিৎসকেরা শরীরের এক স্থানের সুস্থ ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত কোন অংশে প্রতিস্থাপনের কাজে পারদর্শী ছিলেন । ইউরোপে প্লাস্টিক সার্জারি ধীর গতিতে প্রসার লাভ করে । অপরদিকে প্রাচ্যের দেশগুলোতে প্লাস্টিক সার্জারি অপেক্ষাকৃত দ্রুত প্রসারিত হয় । ধারণা করা হয় যে প্লাস্টিক সার্জারি উৎপত্তি হয়েছে প্রাচীন ভারত থেকে ।

ইউরোপীয়দের মধ্যে প্রথম যে ব্যক্তি প্লাস্টিক সার্জারির সার্জারির কথা উল্লেখ করেন তিনি হচ্ছেন অরেলিয়াস কর্নেলিয়াস সেলসাস । তিনি একজন রোমান চিকিৎসক । ৩0 খ্রিস্টাব্দের দিকে তিনি তার লেখা একটি বইয়ে প্লাস্টিক সার্জারির বিভিন্ন দিক উল্লেখ করেন । এখানে তিনি অস্বাভাবিক চোখের পাতার অবস্থার পরিবর্তন , জন্ম থেকে কান , নাক , ঠোঁট ইত্যাদি অঙ্গের কাটাছেঁড়া দূরীকরণ , জোড়া লাগানো আংগুল ঠিক করার মত মতো চিকিৎসাপদ্ধতি নিজের অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞান থেকে বর্ণনা করেন ।

তবে সেলসাস এরপর দীর্ঘ সময় ধরে ইউরোপের প্লাস্টিক সার্জারি আর তেমন অগ্রগতি লাভ করেনি । মূলত ধর্মান্ধতা ইউরোপের বিজ্ঞান অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয় । রোমান সাম্রাজ্যের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা চার্চের কঠিন নিয়ম বিজ্ঞান চর্চা কে থামিয়ে দিতে নেতিবাচক ভূমিকা রাখে ।

পরবর্তীতে রেনেসাঁ যুগে ইউরোপের বিজ্ঞানের কোন শাখায় মতোই প্লাস্টিক সার্জারি এগোতে থাকে । ১৫ শতকের দিকে একজন তুর্কি চিকিৎসক তার লেখা একটি বইয়ে মুখমন্ডলের মধ্যে বিভিন্ন সার্জারি এবং চোখের পাতার অবস্থান পরিবর্তনগত সার্জারি নিয়ে আলোচনা করেন । এছাড়া তিনি পুরুষের স্ফীত স্তনের সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা করেন যা বর্তমানে স্তনের আকার হ্রাস করার যে পদ্ধতি চালু আছে তার ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বিংশ শতাব্দীর একটি বিশ্বযুদ্ধের সময় অনেক সৈন্য আহত হয় । এ সময়ে সৈন্যদেরকে সারিয়ে তোলার জন্য ইউরোপের সর্বশ্রেষ্ঠ সার্জ্নেরা কাজ করত। সে সময় তাদের হাত ধরে প্লাস্টিক সার্জারি তথা পুনর্গঠনমূলক সার্জারি নতুন যুগে প্রবেশ করে । এই সময়ে আরো নিখুঁত ও দ্রুত সময়ে টিস্যু প্রতিস্থাপনের পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয় । বিংশ শতাব্দীতে প্লাস্টিক সার্জারির সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি সাধিত হয় । এখনো প্লাস্টিক সার্জারি একই হারে এগিয়ে চলেছে ।

প্লাস্টিক সার্জারি এতই প্রাচীন যে প্রথম কার উপর প্রয়োগ করা হয়েছিল তা বলা মুশকিল । তবে আধুনিক যুগের প্রথম প্লাস্টিক সার্জারি সম্ভবত ১৯১৬ সালের ২৫ বছর বয়সী ব্রিটিশ ওয়াল্টার ইউ এর উপর।

তখন প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ চলছিল । তিনি ব্রিটিশ নাবিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন । গোলার আঘাতে তার চোখের পাতা পুড়ে গিয়েছিল । তিনি অন্ধ হতে যাচ্ছিলেন । তখন এগিয়ে আসলেন হ্যারল্ড গিলিস নামক একজন শল্যচিকিৎসক , যাকে আধুনিক প্লাস্টিক সার্জারির জনক বলা হয় । তিনি বুক থেকে চামড়া এনে চোখের পাতার চারদিকে লাগিয়ে দেন । তিনি বুক থেকে চামড়া আলাদা না করে টিউবের মতো পেচিয়ে চোখের চারদিকে লাগিয়ে দেন । এতে চামড়ার মধ্যে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং যেহেতু পেচানো ছিল তাই ইনফেকশনের সম্ভাবনা কম ছিল। কিছুদিনের মধ্যেই চোখের আশেপাশের চামড়া সংযোজিত হয়ে যায় এবং ওয়াল্টার ইউ তার চোখ ফিরে পান।

বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে শল্য চিকিৎসকেরা সৈনিকদের চিকিৎসা করতে গিয়ে তারা এটা বুঝতে পারেন এরকম চিকিৎসার মাধ্যমে মানুষের কোন অঙ্গের আকার আকৃতি পরিবর্তন করা সম্ভব । আর এভাবেই জন্ম হয় কত দিক কসমেটিক সার্জারির ।

কিন্তু আমরা অনেকেই মনে করি যে প্লাস্টিক সার্জারি হচ্ছে শরীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার উপায় । কিন্তু এটি পুরোপুরি ভুল । এটি হচ্ছে কসমেটিক সার্জারির অন্তর্ভুক্ত । কসমেটিক সার্জারি মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা । আর এটি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে শরীরের কর্মক্ষম কোন অংশের উপর । মনে করেন কারো মুখমন্ডলের জন্মগত দাগ রয়েছে । তিনি যদি দাগ তুলে ফেলেন তাহলে এটি হবে কসমেটিক সার্জারি । কারণ তিনি সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য এ কাজটি করেছেন ।  

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Share Buttons and Icons powered by Ultimatelysocial