জমজ সন্তান কেন হয়, কিভাবে হয়?

জমজ সন্তান নিয়ে আমাদের কৌতুহলের শেষ নেই। জমজ সন্তান কেন হয়, কিভাবে হয়, জমজ শিশু মাঝে মাঝে দেখতে একরকম হয়, আবার ‍দুজন দেখতে ভিন্ন এবং আলাদা লিঙ্গ বৈশিষ্ট্যের কেন হয়? অনেক অনেক প্রশ্ন। চলুন যময সন্তান কেন হয় সেবিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর জেনে নেই।

জমজ সন্তান কেন হয়?

জমজ সন্তান কিভাবে হয় তা জানার আগে আমাদের জানতে হবে কিভাবে একটি শিশুর জন্ম হয়, বা গর্ভে আসে।

গর্ভে বাচ্চা কিভাবে আসে/বাচ্চা জন্ম নেয় কিভাবে ?

মায়ের শরীরে থাকে ডিম্বানু এবং বাবার শরীর থেকে আসে শুক্রানু। পুরুষের শরীরে কোটি কোটি শুক্রানু তৈরি হলেও  মায়ের শরীরে ২টি ডিম্বাশয় থাকে। প্রতিটি ডিম্বাশয়ে ১ মাস পর পর পর্যায়ক্রমিকভাবে একটি করে ডিম্বানু তৈরি হয়। অর্থাৎ মায়ের দেহে  প্রতি মাসে সাধারণত ১টি করে ডিম্বানু তৈরি হয়। 

jomoj sontan kivabe hoy, জমজ সন্তান কিভাবে হয় ?,  যময সন্তান কেন, যমজ সন্তান, যমজ, যময বাচ্চা
জমজ সন্তান

মায়ের দেহে তৈরি ডিম্বানুটি প্রায় ১৫ দিন নিষিক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে। এই সময়ের মাঝে ডিম্বানুটি  শুক্রানুর সাথে মিলিত হওয়ার সুযোগ পেলে নিষিক্ত হয়ে জাইগোট তৈরি করে, সেখান থেকে ভ্রুণ এবং পর্যায়ক্রমে শিশু হয়ে ওঠে। এটা নরমাল প্রক্রিয়া। অর্থাৎ মা প্রতিমাসে কেবল একবার এবং একটি বাচ্চা ধারণ করার জন্য প্রস্তুত হয়।

জমজ সন্তান কিভাবে হয়?

চলুন মূল টপিকে ফিরে যাই, জমজ সন্তান বলতে বুঝায় একসাথে জন্ম নেওয়া ২টি বাচ্চাকে। যেমনটা আমরা দেখে থাকি জমজ সন্তান দুই ধরণের হতে পারে।

  1. বাইনোভুলার বা ডাইজাইগোটিক
  2. ইউনিওভুলার বা মনোজাইগোটিক 

বাইনোভুলার বা ডাইজাইগোটিক জমজ সন্তান :

যেমনটা আমরা পূর্বে জানলাম, পুরুষের শরীরে কোটি কোটি শুক্রানু তৈরি হলেও  মায়ের শরীরে প্রতিমাসে সাধারণত একটি মাত্র ডিম্বানু থাকে। কিন্তু আপনি এখন এটিও জানেন যে, মায়ের শরীরে ২ টি ডিম্বাশয় থাকে। এখন যদি সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটে ২টি ডিম্বাশয় থেকে ২ টি ডিম্বানু চলে আসে, বাবার শরীরে শুক্রাণুর অভাব না থাকায় ২ টি ডিম্বানুই নিষিক্ত হয়। অর্থাৎ, বাইনোভুলার বা ডাইজাইগোটিক অর্থ হচ্ছে একই সঙ্গে সম্পূর্ণ আলাদা দুটি ডিম্বাণু আলাদা দুটি শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়ে দুটি আলাদা জাইগোট গঠন। এধরণের জমজ সন্তানের বৈশিষ্ট্য, লিঙ্গ, শরীরের বর্ণ আলাদা হতে পারে। যেসব যমজ শিশু দেখতে ভিন্ন হয়, তারা আসলে ‘নন আইডেন্টিক্যাল টুইন’। জমজ শিশুদের দুই তৃতীয়াংশ বাইনোভুলার বা ডাইজাইগোটিক হয়ে থাকে।

 
ওভ্যুলেশনের সময় ২টি ডিম্বানু আসার ব্যতিক্রমী সম্ভাবনাটা বেশি থাকে। কারণ, এসময় একটি ডিম্বানু নষ্ট হয়ে আরেকটি ডিম্বানু তৈরি হতে থাকে।
 

ইউনিওভুলার বা মনোজাইগোটিক জমজ সন্তান :

 
সাধারণত কোটি কোটি শুক্রাণু একটি ডিম্বানুর জন্য লড়াই করে  এবং যুদ্ধে প্রথম হয়ে ডিম্বানুকে নিষিক্ত করার জন্য ১টি শুক্রাণু ভিতরে প্রবেশ করার সাথে সাথে একটি অভেদ্য ঝিল্লি বা দেয়াল তৈরি হয়ে যায়। ফলে অন্য শুক্রাণু ডিম্বানুর ভিতর প্রবেশ করতে পারে না, ঠিক যেমন পূর্বে রাজা কোন সাম্রাজ্য দখল করার পর সেখানে  নতুন আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতো।
উপরোক্ত সাধারণ ঘটনার ব্যতিক্রম ঘটে যদি ডিম্বানুতে কোনভাবে ২টি শুক্রাণু প্রবেশ করতে পারে, তখন ২টি শুক্রানুই ডিম্বানুকে নিষিক্ত করবে। তখন একটি কোষে ২টি জাইগোট তৈরি হবে এবং পরবর্তীতে ২ টি কোষে বিভক্ত হয়ে ২ টি জমজ বাচ্চা জন্ম নিবে। এভাবেই জন্ম নেওয়া যমজ শিশুদের আইডেন্টিক্যাল টুইনও বলা হয়। এখানে দুটি কোষ যেহেতু পূর্বে একটি কোষ ছিল, তাই এদের সব জীন একই হয়ে থাকে। একারণে জমজ বাচ্চা দুটি দেখতে অভিন্ন হয় এবং একই লিঙ্গের হয়।
 
তবে এধরণের জমজ বাচ্চাদের মাঝে মাঝে কিছু বডি পার্টস জন্মের পরেও একসাথে থাকে। যেমন, ২জনের ২টি হাত বা পা জোড়া লেগে থাকতে পারে। বর্তমানে লেজার চিকিৎসা আসার কারণে ২জন যুক্ত জমজ শিশুকে সহজে আলাদা করা সম্ভব হচ্ছে।
আশা করি, জমজ সন্তান কেন হয়, কিভাবে হয় সেবিষয়ে আপনার পরিষ্কার ধারনা হয়েছে। টপিক রিলেটেড যেকোনো প্রশ্ন সম্পর্কে আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Share Buttons and Icons powered by Ultimatelysocial