চুল পাকে কেন

কম বয়সে চুল পাকে কেন? প্রতিরোধের উপায় জেনে নিন

চুল মানুষের সৌন্দর্যের প্রতীক। যখন আমরা ছোট থাকি তখন মাথাভর্তি কালো চুল থাকে। আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে থাকি আর চুল পেকে সাদা হয়ে যায়। আর চুল সাদা হয়ে যাওয়া মানে আপনি বুড়ো হয়ে গেছেন, চুল সাদা হয়ে যাওয়া মানে আপনি আর আগের মত সুন্দর নেই, আপনি আর আকর্ষণীয় নন! এমনসব ভয়ঙ্কর অনুভূতি জন্ম নেয় মনে। আপনারা জানেন কি চুল সাদা হয় বা পাকে কেন ? আজ আমরা জানবো চুল কেন পাকে, কিভাবে চুল পাকা রোধ করা যায় ? এবং পাকা চুলের যত্ন কিভাবে নিবেন ?

চুল পাকার কারণ কি?

চুল পাকার কারণ জানতে হলে আমাদেরকে প্রথমে চুল সম্পর্কে জানতে হবে। চুল মূলত ক্যারোটিন দিয়ে তৈরি। চুলের দুটি অংশ, একটি হচ্ছে শ্যাফট এবং অপরটি রুট । শ্যাফট হলো চুলের উপরিভাগের অংশ যা কাল বা অন্যান্য রঙের হয়ে থাকে এবং রুট হলো নিচের অংশ, যে অংশ আমাদের স্কাল্প এর সাথে যুক্ত থাকে । প্রতিটি চুলের রুট ত্বকের নিচে একটি টিউবের সাথে যুক্ত থাকে। এই টিউবকে বলা হয়ে থাকে হেয়ার ফলিকল । এসকল পিগমেন্ট সেল অনবরত মেলানিন নামক একটি কেমিক্যাল তৈরি করতে থাকে। এই মেলানিন-ই চুলের রঙের জন্য দায়ী। কার চুল কত টা কালো বা ঘন তা নির্ভর করে ওই মানুষের হেয়ার ফলিকল কতটা মেলানিন প্রস্তুত করে।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের হেয়ার ফলিকলের পিগমেন্ট গুলোর মৃত্যু হয়। ফলে, হেয়ার ফলিকলের অভ্যন্তরের পিগমেন্ট সেলগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে মেলানিন উৎপন্ন করতে পারে না। যে কারণে চুলের রং কালো থেকে ধীরে ধীরে ফ্যাকাশে হতে থাকে। এক পর্যায়ে যখন পিগমেন্ট সেলগুলো মেলানিন উৎপাদন প্রায় বন্ধ করে দেয়, ঠিক তখনই চুল পুরোপুরি সাদা হয়ে যায়।

চুল পাকে কেন, চুল পেকে যায় কেন, চুল সাদা হয়ে যায় কেন

কম বয়সে চুল পাকে কেন?

ভিন্ন ভিন্ন মানুষের চুল পাকার সময় এবং হার দুটিই ভিন্ন হয়ে থাকে । কার কোন বয়সে চুল পাকবে তা মূলত নির্ভর করে জিনের উপরে। চুল পেকে যাওয়া জিনের কারণে বংশগত হতে পারে এবং তা বাবা-মা যে কোনো দিক থেকেই আসতে পারে। যদি আপনার বাবা-মার কম বয়সে চুল পেকে যায় তাহলে আপনারও তা হতে পারে। বংশগতভাবে যে বয়সে বাবা-মা অথবা দাদা-দাদীর চুল পেকেছে তার আশে-পাশেই ওই ব্যক্তির চুল পাকবে। তবে বেশিরভাগ মানুষের ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সে প্রথমে একটি বা দুটি চুল পেকে সাদা হয়। প্রথম চুল পাকার ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যেই ছেলেদের চুল পুরোপুরি সাদা হয়ে যায়। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের চুল পাকে একটু দেরিতে।

শ্বেতাঙ্গদের চুল দ্রুত পাকে, মাত্র ৩০ বছরের দিকেই সব চুল সাদা হয়ে যায়। অন্যদিকে আফ্রিকান-আমেরিকান এবং এশিয়ান মানুষের চুল পাকে দেরিতে।

চুল পাকা প্রতিরোধে কি করবেন?

একবার চুল পাকা শুরু করলে আমরা সবাই হতাশ হয়ে পড়ি। অনেকেই হাজার হাজার টাকা খরচ করি চুল পাকা প্রতিরোধ করতে বা কালার করার জন্য। চলুন জেনে নেই, কিভাবে প্রাকৃতিক ভাবে চুল পাকা বন্ধ করা যায়

আমলকি :
আমলকিতে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। খাবারে আমলকি রাখলে চুল পাকা বন্ধ হতে পারে। এছাড়া মাথায় আমলকির পেস্ট ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে উপকার পাওয়া যায়।
মেহেদি :

মেহেদি দিয়ে চুলে প্রাকৃতিক রং আনা যায়। চুল পাকলে অনেকেই মেহেদী ব্যবহার করেন। তবে মেহেদির সঙ্গে কফি পাউডার, একটু দই, লেবুর রস যুক্ত করে মাথায় লাগিয়ে রাখলে ভাল উপকার পাবেন। দুই তিন ঘন্টা পরে পানি ও শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।

লেবুর রস ও বাদামের তেল :
বাদামের তেলের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে চুলে লাগাতে হবে । পরে চুল পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে । এতে চুল পাকার হার কমবে ।

ব্ল্যাক টি :
কম বয়সে চুল পাকা থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি দারুণ কার্যকর পদ্ধতি ব্লাক টি। চায়ের পাতা সিদ্ধ করে ঠান্ডা করতে হবে। পরে মাথায় এটি ঘন্টাখানেক রাখতে হবে। এরপর শ্যাম্পু ছাড়া ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে।

সরিষার তেল ও নারিকেল তেল :
সরিষার তেল ও নারিকেল তেল দিয়ে নিয়মিত ম্যাসাজ করলে চুল পাকা কমতে পারে।

বেশি বেশি পানি পান করুন :

স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে প্রচুর পানি পান করতে হবে। শরীরের বিষাক্ত পদার্থ স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি চুল পাকার কারণ হতে পারে। এজন্য বেশি বেশি পানি পান করুন যাতে বিষাক্ত পদার্থ শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।

ফাস্টফুডকে না বলুন :

ফাস্টফুড বেশি খেলে চুল পড়তে পারে ও চুল সাদা হয়ে যেতে পারে। তাই এ ধরনের খাবার এড়িয়ে যেতে হবে।

চুল পেকে গেলে করণীয়

চুল ডাই বা রং করে ফেলুন :
পাকা চুলের যত্ন নেওয়ার প্রথম নিয়ম হলো পাকাচুল উপড়ে ফেলা যাবে না। আপনি যদি বারবার পাকা চুল তুলে ফেলেন, তাহলে চুলের গোড়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনকি চুল পাতলা হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে চুল রং করে ফেলাই একটি ভালো উপায়। বাসায় বা পার্লারে চুল রং করে ফেলতে পারেন। এর পাশাপাশি চলে ভাল মানের কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
 চুলে হাইলাইটার দিন : 
 
আপনি যদি চুলে সাদা রং না চান তাহলে হালকা রং দিয়ে হাইলাইট করে ফেলতে পারেন। এতে পাকা চুলের উপস্থিতি চোখে পড়ে না।
 অস্থায়ী কনসিলার :

 প্রতি ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ পরপর চুলের রং করতে পারেন, এর আগে নয়। কিন্তু এ সময়ের মাঝে তো আপনার পাকা চুলের গোড়া দেখা যেতে পারে। তাহলে কি করবেন? এ সময় টেম্পোরারি হেয়ার কালার স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। যদি হাতের কাছে না থাকে তাহলে পাকা চুল ঢাকার জন্য অল্প পরিমাণে গাঢ় রঙের আইশ্যাডোও ব্যবহার করতে পারেন।

চুল পাকা শুরু করলে আরেকটি কাজ করতে পারেন। আর তা হলো সান প্রটেকশন। আপনার মাথার ৫০ শতাংশের বেশি চুল পেকে গেলে সূর্যের আলোতে সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সুতরাং এ সময় ছাতা , টুপি বা স্কার্ফ ব্যবহার করতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Share Buttons and Icons powered by Ultimatelysocial