কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতি কি : Kindergarten নাম শুনেনি এমন মানুষ আজ পাওয়া যাবে না। বর্তমানে আমাদের দেশে অলিতে-গলিতে কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। দিনদিন কিন্ডারগার্টেন এর জনপ্রিয়তা আরো বাড়ছে, মানুষ যেন আরো বেশি ঝুঁকে পড়ছে কিন্ডারগার্টেনের দিকে। কিন্তু আমাদের দেশে এই কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতি ও এর বৈশিষ্ট্য না মেনে, প্রকৃত কার্যক্রম এর দিকে না গিয়ে ব্যবসা বানিয়ে দিয়েছে এবং দিচ্ছেন।
চলুন জেনে নিই কিন্ডারগার্টেন স্কুল গুলোতে আসলে কী শেখানো উচিৎ এবং তাদর কার্যক্রম কেমন হয়ে থাকে।
কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতি কি – What is Kindergarten Methodology?
কিন্ডারগার্টেন ( kindergarten ) একটি জার্মান শব্দ অর্থাৎ জার্মানি থেকে এসেছে। কিন্ডারগার্টেন শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘ শিশুদের বাগান ‘।
কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা Friedrich Froebel (1782-1852), তিনি ১৮৪০ সালে Garden of Children নামে প্রথম কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠা করেন।
আর আর কিন্ডারগার্টেন স্কুলের কার্যক্রম পদ্ধতি হচ্ছে কোমল মতি বাচ্চাদের খেলার ছলে তাদেরকে শিক্ষা প্রদান করা।
কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমাদের দেশে যে শিক্ষা ব্যবস্থা চলছে সে রকম। সাধারণত ৩ থেকে ৫ বছরের বাচ্চাদের এসব স্কুলে পড়ানো হয়।
Wikipedi‘র মতে,
Kindergarten is a preschool educational approach based on playing, singing, practical activities such as drawing, and social interaction as part of the transition from home to school.
কিন্ডারগার্টেন স্কুলে বাচ্চাদের খেলাধুলার পরিবেশকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয় এবং খেলার ছলে বাচ্চাদেরকে গণিত, বিজ্ঞান, নৈতিক শিক্ষা, সমাজে কার সাথে কি আচরণ করতে হবে এগুলো শেখানো হয়। সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে প্রতিটি শিশুর ক্ষেত্রেই কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতি উপযুক্ত। তবে ইসলামিক শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা ব্যবস্থার নানান নেতিবাচক মতামত উদ্দীত হয়েছে।
আরও পড়তে পারেনঃ লীফ স্প্রিং কি, কিভাবে কাজ করে?
কিন্ডারগার্টেনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী?
কিন্ডারগার্টেনের লক্ষ্য
শিশুরা খেলতে খেলতে শিখার নামই হচ্ছে kindergarten। আর খেলাচ্ছলে শিক্ষা প্রদান করাই কিন্ডারগার্টেনের লক্ষ্য।
কিন্ডারগার্টেনের উদ্দেশ্য
- একেঅপরের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম কিন্ডারগার্টেনের প্রতিটি শিশু।
- খেলাধুলা, মিলামিশা, যেকোন কর্মকান্ডে স্বাচ্ছন্দ্যে অংশগ্রহণ করতে পারাটাই কিন্ডারগার্টেনের শিশুদের উদ্দেশ্য।
- শিশুদের এই প্রতিষ্ঠান সামাজিকতা এবং সামাজিকতার ধারণা দেবে।
- উপযুক্ত ভাষাজ্ঞান, শব্দ ভান্ডার জানা এবং প্রয়োগ করতে পারার নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান kindergarten।
- ধর্মীয়, সংস্কৃতি রীতিনীতি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা অর্জন করতে পারে এই কিন্ডারগার্টেনের শিশুরা।
- কিন্ডারগার্টেন হতে আরও শিক্ষা নিতে পারে কিভাবে নিজের যত্ন নিবে।
- শিক্ষার্জনের পরবর্তী স্টেপে উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য লিখন, পঠন ও হিসাবের জ্ঞান প্রদান করা হয়ে থাকে এই কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠানে।
কিন্ডারগার্টেন স্কুলের বৈশিষ্ট্য
- কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এসব স্কুলে বাচ্চাদের মনোরঞ্জনের জন্য অনেক কিছু থাকে। তাদের খেলাধুলার জন্য খেলাধুলা উপকরণ থাকে এবং শিক্ষকরা সার্বক্ষণিক ওই স্কুলে থাকা অবস্থায় বাচ্চাদের যত্ন নেন।
- কিন্ডারগার্টেন স্কুলে বাস্তবতার সাথে মিল রেখেও অনেক জ্ঞান প্রদান করা হয়।
- বাচ্চাদের উপর কোন কিছু চাপিয়ে নয় বরং খেলাধুলার মাধ্যমে বাচ্চাদেরকে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়ানো হয়।
আপনার শিশুকে কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করার জন্য জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে। তাই শিশুর জন্ম নিবন্ধন করতে পড়ুন: নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম।
মজায় মজায় শিক্ষা |
বাংলাদেশে কিন্ডারগার্টেন স্কুল গুলোর বর্তমান অবস্থা:
কিন্তু আমাদের দেশে kindergarten হয়ে গেছে একটা বাণিজ্য। এখানে বাচ্চাদেরকে ছোট থেকেই এক অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যে ছেড়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশের কিন্ডারগার্টেন গুলোতে খেলাধুলার ছলে পড়াশোনা তো করানো হয়ই না, এমনকি অনেক স্কুলে খেলাধুলার মাঠ পর্যন্ত নেই। বাচ্চাদের শেখানোর বিভিন্ন উপকরণই নেই।
তারা শুধু বিভিন্ন বই ঠিক করে দেয় এবং এগুলো থেকেই পড়ায় যা প্রকৃতপক্ষে কিন্ডারগার্টেনের কার্যক্রমকে সমর্থন না করে আরও ব্যাহত করে। এতে বাচ্চারা উপযুক্ত শিক্ষিত অর্জন করতে পারিনা বরং তাদের মানসিক মানসিক অবস্থার অবনতি হয় ।
আমাদের দেশের অনেক কিন্ডারগার্টেন স্কুল আছে যেগুলোর কর্তৃপক্ষ কিন্ডারগার্টেন কি তাই জানে না। অনেকে আবার নামটিও ঠিক ভাবে লিখতে পারেনা যেমন আমরা প্রায়ই দেখতে পাই কিন্ডারগার্টেন না লিখে কিন্ডার গার্ডেন, কিন্টার গার্ডেন, কিন্ডারগার্ডেন এগুলো লিখে থাকে। স্কুলের কর্তৃপক্ষ যদি নাই জানেন kindergarten স্কুল কি কিভাবে কাজ করে তাহলে তারা বাচ্চাদের কি শিখাবে!
আমাদের দেশের আধুনিক বাবা মায়েরা বাচ্চাকে আরো বেশি প্রেশার দিয়ে শেখানোর উদ্দেশ্যেই মূলত প্রাইমারী স্কুলে না দিয়ে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন, তাই দোষ আমাদের নিজেদেরই।
এগুলো কিন্তু আসলে বাচ্চাদের মানসিক অবস্থার অনেক ক্ষতি করে দেয়, কারণ আমাদের দেশে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়াশোনার যে চাপ থাকে বাচ্চারা সেই চাপ নেওয়ার সমর্থই হয় না এই বয়সে। তাই তাদের মানসিক গ্রোথ হওয়ার পরিবর্তে মানসিক ক্ষতি হয়ে থাকে।
কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতি কি হওয়ার কথা, আর কি হয়ে আছে বলুন তো! তাই নিজে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সঠিকভাবে জানুন, অন্যকেও বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করুন।
সুবিধা এবং অসুবিধা