ব্ল্যাকহোল কী? ব্ল্যাকহোল কীভাবে সৃষ্টি হয়?

ব্ল্যাকহোল কী? ব্ল্যাকহোল শব্দটি আমাদের প্রায় সবার কাছে পরিচি অনেকেরই ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা আছে। আবার অনেকেই কিছু কিছু জানেন আবার অনেকেই এই শব্দটির সাথে একেবারেই অপরিচিত।

আসলেই ব্ল্যাকহোল একটি অদ্ভুত জিনিস। এই ব্ল্যাকহোল নিয়ে আমাদের প্রায় সবার মনেই অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত প্রশ্ন উঁকি মারে। আজকের দিনে আমরা ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পেরেছি।

ব্ল্যাকহোল নিয়ে আমাদের মাঝে যে সাধারণ প্রশ্ন গুলো জেগে উঠে সেগুলো হচ্ছে – ব্ল্যাকহোল কি সত্যিই আছে? আমাদের পৃথিবী থেকে ব্ল্যাকহোল কত দূরে অবস্থিত? ব্ল্যাকহোল সৃষ্টি হয় কিভাবে? একজন মানুষ ব্ল্যাকহোলের কাছাকাছি গেলে কি হবে? ব্ল্যাকহোল কী সবসময় কালো হয়?

ব্ল্যাক হোল কী?

ব্ল্যাকহোল কী?

ব্ল্যাকহোল হচ্ছে এই মহাজগতের একটি মহাজাগতিক বিস্ময়। এটি এমন একটি জিনিস যেখানে পদার্থের অণুগুলো ঘনত্ব খুবই বেশি। একটি ব্ল্যাকহোলের আয়তন আমাদের সূর্যের কয়েক গুণ হতে কয়েক বিলিয়ন গুন হতে পারে।

একটি ব্ল্যাকহোলে এক ঘন সেন্টিমিটার এ অবস্থিত পদার্থের ভর ছোটখাটো কয়েকটা পাহাড়ের সমান অথবা তার থেকেও বেশি হতে পারে। আশা করি বুঝতে পারতেছেন যে ব্ল্যাকহোল কী এবং পুরো ব্ল্যাকহোলের ভর কত হতে পারে।

এই অস্বাভাবিক ভরের জন্যই ব্ল্যাকহোল সবকিছুই তার দিকে টেনে নেয়। এমনকি আলোকরশ্মি কিংবা তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গ ও এই আকর্ষণকে এড়াতে পারে না।

আমরা জানি পৃথিবীর সব বস্তুই একে অপরকে আকর্ষণ করে। একে মহাকর্ষ বল বলে। আর ব্ল্যাকহোলের অস্বাভাবিক ভরের জন্য এর মহাকর্ষ বল এতই বেশি যে কোন কিছুই একে এড়াতে পারে না। ব্ল্যাকহোলে পদার্থ বিজ্ঞানের কোন সূত্রই কাজ করে না।

আরও পড়তে পারেনঃ কম্পাস ছাড়াই দিক নির্ণয় করার উপায়? কেবলার দিক নির্ণয় করার উপায় কী?

ব্ল্যাকহোল কিভাবে সৃষ্টি হয়?

ব্ল্যাকহোল কী, সেটি জানলেই আমরা বুঝতে পারি- ব্ল্যাকহোল নক্ষত্রের মৃত্যুর পরে সৃষ্টি হয়। আমরা জানি যে নক্ষত্রের ভেতর ফিউশন বিক্রিয়া অবিরাম ভাবে ঘটতে থাকে। দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে হিলিয়াম নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়।

ফিউশন বিক্রিয়া মাধ্যমে প্রচুর শক্তি উৎপন্ন হয় এবং তার আশেপাশে বিচ্ছুরিত হয় এবং আমরা আলো হিসেবে দেখতে পাই। একটি নক্ষত্রের মধ্যে রেডিয়েশন এবং গ্র্যাভিটির মধ্যে সাম্যবস্থা থাকলে নক্ষত্র স্থির থাকে। নক্ষত্রের কেন্দ্রে প্রচুর চাপ এবং তাপের জন্য আয়রন উৎপন্ন হয়। আয়রন নক্ষত্রের কেন্দ্রে ঘনীভূত হতে থাকে।

এই আয়রন থেকে কিন্তু কোন শক্তি উৎপন্ন হয় না। ফলে নক্ষত্রের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হতে থাকে। যখন আয়রন উৎপন্ন হতে হতে গ্র্যাভিটি এবং রেডিয়েশন এর মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় তখন সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে নক্ষত্রটি সংকুচিত হয়ে যায় এবং এর ভর কেন্দ্রে ঘনীভূত হতে থাকে । এর ভর অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এটি সবকিছুকে নিজের দিকে আকর্ষণ করতে শুরু করে। এর অস্বাভাবিক ভরের জন্য কোন কিছুই এর মহাকর্ষ বল উপেক্ষা করতে পারে না এবং সবকিছুই এর মধ্যে হারিয়ে যায়। একে আমরা ব্ল্যাকহোল বলি।

ব্ল্যাকহোল কত প্রকার?

ব্ল্যাকহোল কীভাবে তৈরী হয়, সে তথ্যের ভিত্তিতে এতি অনেক ধরনের হতে পারে। তবে দুই ধরনের ব্ল্যাকহোল সবচেয়ে বেশি পরিচিত। একটি হচ্ছে স্ট্যালার মাস ব্ল্যাকহোল, অপরটি হচ্ছে হচ্ছে সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল

স্ট্যালার মাস ব্ল্যাক হোল ব্ল্যাকহোল আকারে ছোট হয়। এসব ব্ল্যাকহোল আমাদের সূর্যের কয়েক গুণ হয়।

আর সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল আমাদের সূর্যের থেকে প্রায় কয়েক বিলিয়ন গুণ বড় হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে সকল গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের মাঝখানে একটি সুপার ম্যাসিভ ব্লাকহোল থাকে। প্রকৃতপক্ষে এই সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলকে কেন্দ্র করে সমগ্র ছায়াপথ ঘুরতে থাকে।

ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের আরেকটি বিষয় জানতে হবে সেটি হচ্ছে ইভেন্ট হরাইজন। ইভেন্ট হরাইজন হচ্ছে এমন একটি সীমারেখা যেটি অতিক্রম করলে কোন বস্তু আর ব্ল্যাকহোলের মহাকর্ষ বল অপেক্ষা করতে পারে না অর্থাৎ ওই বস্তুটি ব্ল্যাকহোলের মধ্যে চিরতরে হারিয়ে যাবে।

আমরা যে ছায়াপথে আছি অর্থাৎ মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি এর মাঝেও একটি সুপার ম্যাসিভ ব্লাকহোল আছে। এটি আকারে সূর্য থেকে কয়েক বিলিয়ন গুন বড় এবং এটি আমাদের সৌরজগৎ থেকে কয়েক হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।

এখন মনে করেন যে আপনাকে ব্ল্যাক হলে ছেড়ে দেয়া হলো। তাহলে আপনার কি অবস্থা হবে?

কেউ ব্লাক হোল এ পড়ে গেলে কি হবে?

প্রকৃতপক্ষে আমাদের পুরো সৌরজগৎ একটি ব্ল্যাকহোলে হারিয়ে যেতে সেকেন্ডের ভগ্নাংশেরও কম সময় লাগবে। তাহলে একবার চিন্তা করে দেখুন যদি আপনি ব্ল্যাকহোলে পড়ে যান তবে আপনার কি অবস্থা হতে পারে।

ব্ল্যাকহোলের অস্বাভাবিক ভরের জন্য আমরা তো দূরের কথা আমাদের পুরো সৌরজগত-ই নিঃশেষ হয়ে যাবে। তাই ব্ল্যাকহোলের আকর্ষণ ক্ষমতা আছে এমন এরিয়ায় যেকোনো কিছু চলে আসলেই তা মূহুর্তের মধ্যে হারিয়ে যাবে।

অবশ্যই, আপনি যে ধরণের ব্ল্যাকহোলের মধ্যে পড়েন কেন চূড়ান্ত মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা আপনি ছিন্ন হয়ে যাবেন। কোনও উপাদান, বিশেষত মাংসল মানবদেহ অক্ষত থাকতে পারবেনা।

সুতরাং আপনি একবার ব্লাক হোলের সীান্তে এসে গেলে, আপনি শেষ। এখানে থেকে বেরোনোর কোনো পথই নেই।

ব্ল্যাকহোল কী শুধু কালো রঙের-ই হয়?

আসলে ব্ল্যাকহোলের কাছে গিয়ে ছবি তুলে আনা একেবারেই অসম্ভব। কারণ তো বুঝতেই পারতেছেন। ব্ল্যাকহোলের যদি কিছু চলে যায় তাহলেই তার ফিরে আসে না। প্রকৃতপক্ষে ব্ল্যাকহোল দেখা যায় না। এর অস্তিত্ব অনুভব করতে হয় বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করা যায়।

কিন্তু ব্ল্যাকহোলের চারদিকে উজ্জ্বল আলো দেখা যায়। এ আলোর উজ্জলতা আমাদের সূর্যের মতো লক্ষ লক্ষ নক্ষত্রের উজ্জলতা থেকে বেশি হবে। এর কারণ কি?

আমরা আগেই জেনেছি ব্ল্যাকহোল সবকিছুই নিজের দিকে টেনে নেয়। এমনকি বায়ুমণ্ডল ও। যখন কোন কিছু প্রচন্ড বেগে ব্ল্যাকহোলের দিকে যেতে থাকে তখন সেটি সংকুচিত হতে থাকে এবং এক পর্যায়ে গ্যাসীয় পদার্থ প্রচণ্ড বিস্ফোরণের সৃষ্টি করে। এজন্য ব্ল্যাকহোলের চারদিকে এত আলো দেখা যায়।

আজ আমরা এই ব্ল্যাকহোল নিয়ে টুকিটাকি কিছু কথাবার্তা বললাম। যদিও বিজ্ঞানীদের নিরন্তর গবেষণা চলছে তারপরও আমরা পরিষ্কারভাবেই কিছুই জানিনা। হয়তো ভবিষ্যতে ব্ল্যাকহোল কী সে সম্পর্কে আমরা আরো বিস্তারিত জানতে পারবো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *