আমরা এই জিনিসটি নিয়ে প্রায়ই চিন্তা করি যে সাগরের পানি লবণাক্ত হয় কেন ? আবার অনেকেই চিন্তা করে যে পানি তো নদী দিয়ে সাগরে যায় তাহলে নদীতে লবণ নেই অথচ সাগরের পানিতে লবণ থাকে কিভাবে ?
সাগরে যে লবণ পাওয়া যায় তার পেছনে সবচেয়ে বেশি যে দায়ী সে হচ্ছে পানি । চলুন জেনে নেই সমুদ্রের পানি কিভাবে লবণাক্ত হয় ।
সাধারণত নদী পাহাড় বা কোন হৃদ থেকে উৎপত্তি লাভ করে । সেই নদী অনেক অনেক কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে সাগরে পতিত হয় । আবার অনেক নদী অনেক দেশ ও পাড়ি দিয়ে থাকে । সুতরাং একটা নদীকে অনেক জায়গা অতিক্রম করতে হয় । আমরা জানি বৃষ্টির পানি হালকা এসিডিক হয়ে থাকে । কারণ বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড থাকে, অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে কার্বনিক এসিড বৃষ্টি হয় । তাই বৃষ্টিপাতের সময় পাহাড়ের শিলালিপি হালকা ক্ষয় হয় এবং এতে বিভিন্ন আয়নের সৃষ্টি হয় । এইসব কিছুই নদীর পানির সাথে মিশে যায় । এভাবে নদীর পানিতে অনেক ধরনের খনিজ লবণ জমা হয়। নদী সেগুলো নিয়ে সাগরে ফেলে । আপনার ভেবে অবাক হবেন যে নদীর পানিতে ও কিন্তু লবণ থাকে কিন্তু তা খুবই কম পরিমাণে । আমরা যে টিউবয়েল থেকে পানি খাই ওটাতে ও লবণ থাকে কিন্তু তাও খুব অল্প পরিমাণে।
সমুদ্র থেকে লবণ কালেকশন |
এখন আসা যাক সাগরের বিষয়ে, আমরা জানি যে অল্প পরিমাণ পানিকে যদি খোলা জায়গায় রেখে যায় তাহলে তা অদৃশ্য হয়ে যায় । আসলে এই বিষয়টা হচ্ছে স্বত:বাষ্পীভবন । সাগর থেকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি তাপের প্রভাবে বাষ্প হয়ে এভাবে উড়ে যায় । আর লবন এর ঘনত্ব বাড়তে থাকে । এভাবে সমুদ্রের পানি লবণাক্ত হয় ।
এখন আসি সমুদ্রের লবণাক্ত লবণাক্ততার জন্য কি শুধুমাত্র নদীই দায়ী ? না । সমুদ্রের নিচে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে অনেক খনিজ পদার্থ এসে সমুদ্রের পানিতে মিশে যায় । এর ফলেও ধারণা করা হয় যে সমুদ্রের পানি লবণাক্ত হয় । আরেকটি প্রশ্ন থেকেই যায় যে – সমুদ্রের লবণাক্ততা কি ধীরে ধীরে বেড়ে যাবে ? এটিরও উত্তর হচ্ছে না । কারণ যে পরিমাণ খনিজ লবণ সমুদ্রে গিয়ে পড়ে তার অনেকটাই অনেক খনিজ পদার্থ হিসেবে সঞ্চিত হয়ে যায় । আবার অনেকটা অংশ বিভিন্ন প্রাণীরা তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করে । উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে নদীর পানির সাথে যে ক্যালসিয়াম আসে তা শামুক ও কোরালের মতো সামুদ্রিক প্রাণীর দেহ গঠনে ব্যবহৃত হয়ে যায় । বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে জানা গেছে যে অন্তত কয়েক লক্ষ লক্ষ বছর ধরে সমুদ্রের লবণাক্ততা প্রায় একই আছে ।