বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে দেখা যায় লাল সাদা রঙের টাওয়ার এবং রাতের বেলায় সেখানে লাল বাতি জ্বলে । কিন্তু সব টাওয়ারেই কেন লাল বাতি জ্বালানো হয় ? কখনো ভেবে দেখেছেন কি, কেন গ্রামীনফোন তার স্বকীয় নীল রঙের বাতি দেয় না, কিংবা বাংলালিঙ্ক তাদের হলুদ রঙ ? চলুন জেনে নেই কেন সবাই টাওয়ারে লাল বাতি ব্যবহার করছে ।
আলো একটি শক্তি, যা কোন বস্তুর উপর পড়লে দর্শনের অনুভূতি জাগায় । আলো বস্তুকে দৃশ্যমান করে, কিন্তু এটি নিজে অদৃশ্য । আমরা আলোকে দেখতে পাই না, কিন্তু আলোকিত বস্তুকে দেখি । লাল একটি মৌলিক রঙ বা বর্ণ । দৃশ্যমান আলোর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্য লাল রঙের (প্রায় ৬২৫-৭৪০ ন্যানোমিটার) ।
মোবাইল টাওয়ার |
আলোর একটি ধর্ম হচ্ছে scattering বা বিক্ষেপণ । আলো তার যাত্রাপথে বায়ুর অনু বা ধূলোবালি দ্বারা বিক্ষেপিত হয় অর্থাৎ ছড়িয়ে পরে। আলো কিরকম বিক্ষেপিত হবে তা নির্ভর করে তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের উপর । যে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশী তার বিক্ষেপণ কম, তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কম হলে বিক্ষেপণ বেশি হবে ।
সূর্যের সাদা আলো যে সাতটি রংয়ের সমণ্বয়ে তৈরী (বে নী আ স হ ক লা) তার মধ্যে বেগুনী, নীল – এগুলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম এবং সবুজ, কমলা, লাল – এদের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশী । এজন্য নীল আলো বিক্ষিপ্ত হওয়ার ক্ষমতা সবচেয়ে বেশী (তাই আকাশ নীল দেখায়) ।
অন্য দিকে লাল আলোর বিক্ষেপন ক্ষমতা কম হওয়ায় এটি কম ছড়িয়ে যায়, কিন্তু বহুদূর পর্যন্ত যেতে পারে । লাল রং অনেক দূর থেকে সহজেই চোখে পড়ে । যার কারণে ট্রাফিক লাইটে বা বিপদজনক কিছু সংকেতে লাল আলো ব্যবহার করা হয় ।
ছোটবেলা অনেকে টার্গেট লাইট নিয়ে খেলেছি আমরা, যেখানে ছোট একটি লাল রঙের লাইট থাকতো, এবং অনেক দূর পর্যন্ত আলো ফেলা যেত । টর্চটাতে যদি লাল আলো না দিয়ে নীল আলো দিতো, তাহলে কিন্তু এতদূর যেত না ।
লাল আলোর এই ক্ষমতার কারণেই উঁচু মোবাইল টাওয়ার, নিউক্লিয়ার টাওয়ারে লাল রংয়ের সতর্কীকরণ বাতি জ্বালানো হয় । কারণ টাওয়ার গুলোর উচ্চতা ১৫০ মিটারের অধিক হয়ে থাকে । অনেক সময় বিমান বা উড়োজাহাজও কাছাকাছি এমন উচ্চতা দিয়ে চলাচল করে । রাতের বেলা পাইলট যেন দূর থেকে লাল রঙ ( বিপদ সংকেত ) দেখে সতর্ক হতে পারে, এবং পর্যাপ্ত সময় নিয়ে পথ পরিবর্তন করতে পারে এজন্যই মূলত টাওয়ারের উপর লাল বাতি জ্বালিয়ে দেওয়া হয় । একই কারণে টাওয়ারের বডিও লাল এবং সাদা রঙের করা হয় ।