বাচ্চাদের দাঁত ওঠার বয়স এবং বাচ্চাদের দুধ দাঁত পড়ে যায় কেন?

বাচ্চাদের দুধ দাঁত পড়ে যায় কেনঃ আপনি যদি পিতা-মাতা হন তাহলে আপনাকে অবশ্যই বাচ্চাদের দাঁত নিয়ে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হবে। বাচ্চাদের দাঁত ওঠা পড়া নিয়ে প্রায় সব পিতা-মাতাকেই কমবেশি ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বাচ্চাদের সব দাঁত ওঠা না পর্যন্ত সকল পিতা-মাতাই কম বেশি চিন্তামগ্ন থাকেন। অনেক সময় বাচ্চাদের দাঁত ওঠার বয়স বা পড়া নিয়ে অনেক জটিলতা সৃষ্টি হয়।

বাচ্চাদের যখন দুধ দাঁত উঠতে শুরু করে তখন ওই বাচ্চার হাসি পিতা-মাতা সকল কষ্ট দূর করে দেয় ঠিক তেমনি যেকোন বাচ্চার ফোকলা দাঁতের হাসি পৃথিবীর সকল বস্তুর চেয়েও দামি।

শিশুদের মাতৃগর্ভেই দাঁত উঠা শুরু হয় কিন্তু তা মাড়ির নিচেই থাকে। সাধারণত বাচ্চাদের দাঁত ওঠার বয়স তিন মাস থেকে দাঁত উঠা শুরু হয় এবং ছয় বছর পর্যন্ত দাঁত উঠে। এগুলোকে দুধ দাঁত বা প্রাথমিক দাঁত বলা হয়। এগুলো সব পড়ে যায় পরবর্তীতে আবার দাঁত উঠে। ৬ বছরের বাচ্চার বিশটি দাঁত থাকে। বাচ্চাদের সাধারণত ৬ থেকে ১২ বছরের মাঝে সব দুধ দাঁত পড়ে যায়

বাচ্চাদের-দাঁত-ওঠার-বয়স

বাচ্চাদের এই দুধ দাঁত পড়ে যায় কেন?

বাচ্চাদের দাঁত ওঠার বয়স পার হয়ে দাঁত পড়ে যাওয়ার পর যে দাঁত উঠে সে গুলোকে স্থায়ী দাঁত বলে। দুধ দাঁত পড়ে গিয়ে স্থায়ী দাঁতের জন্য জায়গা করে দেয়। এই দুধ দাঁত স্থায়ী দাঁত উঠতে সাহায্য করে।

আমাদের ইনসিসর বা কর্তন, ক্যানাইন বা ছেদন, প্রি মোলার বা অগ্রপেষণ, মোলার বা পেষণ এই চার ধরনের দাঁত থাকে। আমাদের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দুই পাটিতে ১৬টি করে মোট ৩২টি দাঁত থাকে। এক পাটিতে ৪টি কর্তন দাঁত, ২টি ছেদন দাঁত, ৪টি অগ্রপেষণ এবং ৬টি পেষণ দাঁত থাকে।

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এক পাটিতে ৪টি কর্তন দাঁত, ২টি ছেদন দাঁত, এবং ৪টি পেষণ দাঁত উঠে। অর্থাৎ এক পাটিতে ১০টি করে মোট ২০টি দাঁত উঠে। পরবর্তীতে বাচ্চাদের এইসব দুধ দাঁত পড়ে যায় এবং স্থায়ী ৩২ টি দাঁত উঠে।

আরও পড়তে পারেনঃ কম বয়সে চুল পাকে কেন? চুল পাকা প্রতিরোধের উপায় জেনে নিন।

বাচ্চাদের কখন দাঁত উঠে এবং কখন দাঁত পড়ে যায়? বাচ্চাদের দাঁত ওঠার বয়স

 

দাঁতের অবস্থানউঠার সময় কালপড়ে যাওয়ার সময় কাল
নিচের পাটির কেন্দ্রীয় কর্তন দাঁত ৬ থেকে ১০ মাসের মধ্যে৬ থেকে ৭ বছরের মধ্যে
উপরের পার্টির কেন্দ্রীয় কর্তন দাঁত৮থেকে ১২ মাসের মধ্যে৬ থেকে৭বছরের মধ্যে
উপরের পাটির পার্শ্বীয় কর্তন দাঁত ৯ থেকে ১৩ মাসের মধ্যে৭ থেকে ৮ বছরের মধ্যে
নিচের পাটির পার্শ্বীয় কর্তন দাঁত১০ থেকে ১৬ মাসের মধ্যে৭ থেকে ৮ বছরের মধ্যে
উপরের পাটির প্রথম মোলার দাঁত১৩ থেকে ১৯ মাসের মধ্যে৯ থেকে ১১ বছরের মধ্যে
নিচের পাটির প্রথম মোলার দাঁত১৪ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে৯ থেকে ১১ বছরের মধ্যে
উপরের পাটির ছেদন দাঁত১৬ থেকে ২২ মাসের মধ্যে১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে
নিচের পাটির ছেদন দাঁত১৭ থেকে ২৩ মাসের মধ্যে৯ থেকে ১২ বছরের মধ্যে
নিচের পাটির দ্বিতীয় মোলার দাঁত২৩ থেকে ৩১ মাসের মধ্যে১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে
উপরের পাটির দ্বিতীয় মোলার দাঁত২৫ থেকে ৩৩ মাসের মধ্যে১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে

আপনি শুনে অবাক হবেন যে সাধারনত বাচ্চাদের যে ক্রমে দাঁত উঠে ঠিক একই ক্রমে দাঁত পড়ে। তবে মাঝে মাঝে এর ব্যতিক্রম হতে পারে।

দাঁত সুন্দর করতে সতর্কতা

তারই হাসি সুন্দর যার কিনা দাঁত সুন্দর। বাচ্চাদের স্থায়ী দাঁত না উঠা পর্যন্ত পিতা-মাতাকে অনেক খেয়াল রাখতে হয়। অনেক সময় বাচ্চারা দাঁত ওঠার সময় জিব্বা দিয়ে নাড়িয়ে দাঁত কে বাঁকিয়ে ফেলতে পারে।

বাচ্চাদের কখন দাঁত উঠে

 

বাচ্চাদের দাঁত ওঠার বয়স এর প্রেক্ষিতে অনেক সময় জিহ্বা দিয়ে নাড়তে যখন দাঁত পড়ার কথা তার আগেই ফেলে দিতে পারে। আবার অনেক সময় দাঁত পড়ার সঠিক সময় হওয়া সত্ত্বেও দাঁত নাও পড়তে পারে। অনেক সময় ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া লাগতে পারে আবার অনেকেরই বাইরে থেকে দাঁত ফেলতে হতে পারে। দাঁত ফেলার সময় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে-
  • দাঁত ফেলার পর দাঁত ফেলার পর মুখ ভালো করে পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। পানি দিয়ে কুলকুচি করতে হবে।
  • দাঁত ফেলে দেয়ার পর যদি রক্তপাত হয় মাড়িতে গজ কাপড় দিয়ে চাপ দিয়ে ধরতে হবে।
  • আপনার বাচ্চাকে ঠান্ডা জাতীয় খাবার খাওয়ালে ভাল হয়। এক্ষেত্রে আইসক্রিম খাওয়াতে পারেন।

অনেক সময় বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় হালকা ব্যথা হতে পারে। আবার যখন নড়তে শুরু করে তখন ও অল্প দাঁত ব্যথা হতে পারে। এতে আপনারা ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।

আপনাদের বাচ্চার দাঁত ভালো রাখতে অবশ্যই ছোট থেকে দুই বেলা দাঁত ব্রাশ করার অভ্যাস করাবেন। আপনারা যদি মনে করেন যে দুধদাঁত তো পড়েই যাবে তাহলে এত যত্ন নেয়ার কি দরকার?

তাহলে ভুল ভাবছেন কারন দুধ দাঁতে যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে তা স্থায়ী দাঁতেও প্রভাব ফেলবে। এমনকি দাঁতের জন্য আপনার বাচ্চার মুখের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

আশাকরি, উপরোক্ত আলোচনা থেকে বাচ্চাদের দাঁত ওঠার বয়স এবং দাঁত পড়ে যায় কেন এ সম্পর্কে সামগ্রিক ধারনা পেয়েছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *