অলিম্পিক দর্শক হয়ে থাকলে আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে অনেক পদক বিজয়ী সেই পদক কামড়ে ধরে ছবি তুলেন। আপনার কি মনে হয়, এটাই অলিম্পিকের নিয়ম?
ভেবে থাকাটা কিন্তু অস্বাভাবিক নয়, বিজয়ীর মেডেল কামড়ে ধরার কথা চিন্তা করা বা এমন কোনো ছবি দেখলেই যেন অলিম্পিক বিজয়ীর কথাই মনে আসে। চলুন অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় জয়ীদের পদক কামড়ে ধরার রহস্য উদঘাটন করা যাক!
অলিম্পিকে পদক জয়ীদের মেডেলে বা পদক কামড়ে ধরার কারণ কি?
অলিম্পিক মেডেল কামড়ে ধরার পিছনে মূলত দুইটি কারণ রয়েছে।
- ফটোগ্রাফারদের অনুরোধ
- মেডেলের উপাদান টেস্ট
বলুনতো, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞ কোনটি? যি, অবশ্যই অলিম্পিক। যে প্রতিযোগিতায় শতাধিক দেশের প্রায় সকল জনপ্রিয় ইভেন্টে হাজার খানেক প্রতিযোগি পদকের জন্য লড়াই করেন, সেই প্রতিযোগিতার প্রতিদ্বন্দ্বী কোথায়!
শত শত বাধা পেরিয়ে সেই ক্রীড়াযজ্ঞে যখন কোনো ক্রীড়াবিদ পদক পেয়ে যান, তখন আর দশটা প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়নদের মতো গলায় মেডেল নিয়ে হাসি হাসি মুখে কেন ছবি তুলবেন! মুহূর্তটি স্মরণীয় করে তুলতেই ফটোগ্রাফাররা অলিম্পিক মেডেল বিজয়ীদের পদক কামড়ে ধরে ছবি তুলতে অনুরোধ করেন।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে অলিম্পিক গোল্ড মেডেল জয়ীদের পদক কামড়ে ধরার পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝেও এই প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন ‘The Complete Book Of The Olympics’ বইটির সহ-লেখক ডেভিড ওয়ালেচিন্সকি।
যদি আপনি ভেবে থাকেন যে কেউ অলিম্পিক পদক কামড়ে ধরে দাঁত ভেঙেছে কিনা! উত্তর হলো, যি! অবশ্যই। ২০১০ সালে, জার্মান luger David Moeller তার রৌপ্য পদক কামড়ে ধরে দাঁতের কোণা ভেঙে ফেলেছিলেন, তবে ভালো খবর হলো তাঁর মা ছিলেন একজন ডেন্টিস্ট।
বর্তমান ফটোগ্রাফার কিংবা মিডিয়ার এই চাহিদার পাশাপাশি দ্বিতীয় কারণটি বেশ মজার। সোনা আসল কিনা তা বলার একটি উপায় ছিল মেডেল কামড়ানো, কেননা খাঁটি স্বর্ণে সামান্য কামড়ের চিহ্ন পড়ে যাবে।
এখন প্রশ্ন হলো, আপনি কি মনে করেন, অলিম্পিক মেডেলগুলো শতভাগ স্বর্ণ, রৌপ্য কিংবা ব্রোঞ্জের তৈরি?
অবশ্যই না। অলিম্পিক বিজয়ীদের সর্বশেষ খাঁটি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়েছিলো ১৯১২ সালে, অর্থাৎ এক শতাব্দী সময়েরও আগে। এরপর আর কখনোই কোনো অলিম্পিক অ্যাথলেটের গলায় ২৪ ক্যারেট খাঁটি স্বর্ণের তৈরি পদক ঝোলানো কিংবা কামড় দেওয়ার সৌভাগ্য হয় নি।
চিত্র: উসাইন বোল্ট তার অলিম্পিক মেডেল কামড়ে ধরে ছবি তুলছেন |
গত রিও অলিম্পিকে স্বর্ণের পদকটি মূলত রুপা দিয়েই বানানো ছিলো, সেবারের স্বর্ণ পদকগুলোতে কোনো পারদের অপদ্রব্য ছিলো না। ৫০০ গ্রাম ভরের মেডেলটির ৯৮.৮ শতাংশই ছিলো ৯২.৫% বিশুদ্ধ রুপার তৈরি। বাকি ১.২ শতাংশ ছিলো ৯৯.৯৯% বিশুদ্ধ স্বর্ণের প্রলেপ, যার ভর ছিলো মাত্র ৬ গ্রাম।
প্রতিটি গোল্ড মেডেলের মূল্য ছিলো ৫৬৫ ডলার (আমেরিকান)। খাঁটি স্বর্ণ দিয়ে যদি স্বর্ণ পদকগুলো বানানো হলে প্রতিটির দাম হতো ২১,২০০ মার্কিন ডলার! যদি সেগুলো প্রকৃতপক্ষে খাঁটি স্বর্ণের হতো তাহলে, পুরস্কারগুলো তৈরিতে IOC কে প্রায় 17 মিলিয়ন ডলার খরচ করতে হতো।
তবে এখন অলিম্পিয়ানরাও সম্ভবত জানেন যে, তাদের স্বর্ণপদকের বেশিরভাগ অংশই রূপা এবং তামার তৈরি। তাই, দ্বিতীয় কারণটির চেয়ে প্রথম কারণটিই বেশি যুক্তিসঙ্গত।
তাহলে বুঝলেন তো, অলিম্পিকে পদক জয়ীরা কেন তাদের মেডেল কামড়ায়?