পৃথিবীর মহাসাগর সম্পর্কে কিছু তথ্য আছে যা সবাই জানে। যে কেউ সমুদ্র সৈকতে ঢেউয়ের ধাক্কা খেয়েছে সে অবশ্যই জানে সমুদ্রের পানি কেমন লবণাক্ত। কিন্ত সমুদ্রের পানি লবণাক্ত কেন, তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকতে পারে। আপনি কক্সবাজার কিংবা সেন্ট মার্টিন উপকূলে সমুদ্রের এক গলা জল গিলেন বা না গিলেন, কিন্তু এটা সত্য যে সমুদ্রের পানি লবণাক্ত।
লবণ একটি জীবন রক্ষাকারী পদার্থ, এবং সমুদ্রের প্রচুর লবণ পশুদের খাওয়ানো হয়। কিন্তু ভূপৃষ্ঠ থেকে অবিরাম প্রবাহের জন্য ধন্যবাদ, লবণাক্ততার মাত্রা মোটামুটি স্থির রাখার জন্য।
সমুদ্রের লবণাক্ততা হ্রদ এবং নদীর মতো মিঠা জলের বৈশিষ্ট্য থেকে নিজেকে পৃথক করে রেখেছে। প্রশ্ন হলো সমুদ্রের পানি লবণাক্ত কেন এবং কিভাবে এটি লবনাক্ত হয়েছে?
সমুদ্রের পানি লবণাক্ত কেন?
রাসায়নিকভাবে বলতে গেলে, লবণ হল বিপরীতভাবে চার্জযুক্ত আয়নগুলোর দুটি গ্রুপের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌগ। যখন একটি পরমাণুতে ইলেকট্রনের চেয়ে বেশি প্রোটন থাকে, তখন এটি একটি ধনাত্মক চার্জযুক্ত আয়ন হয়ে যায়। প্রোটনের চেয়ে বেশি ইলেকট্রনের পরমাণু হল ঋণাত্নক আয়ন বা অ্যানায়ন। বিপরীত চার্জযুক্ত পরমাণু একে অপরকে রাসায়নিক যৌগ গঠনে আকৃষ্ট করে।
লবণের রাসায়নিক গঠন হল সোডিয়াম ক্লোরাইড। সোডিয়াম হচ্ছে পজিটিভ আয়ন এবং ক্লোরাইড হচ্ছে নেগেটিভ আয়ন। সোডিয়াম এবং ক্লোরাইড সমুদ্রেও সর্বাধিক লবণ তৈরি করে, তবে এগুলো একমাত্র খনিজ নয় যা সমুদ্রের লবণাক্ততায় অবদান রাখে।
ড. মরগান রেভেন, রসায়নবিদ, ভূ-জীববিজ্ঞানী এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক মেন্টাল ফ্লসকে বলেন –
সমুদ্রের লবণ কেবল সোডিয়াম এবং ক্লোরাইড নয় – এটি ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের মতো একগুচ্ছ আয়নগুলির মিশ্রণ, যার বেশিরভাগই জমিতে পাথর হিসাবে থাকে।
সমুদ্র তার লবণের পরিমাণের জন্য আরও একটি উৎস হাইড্রোথার্মাল তরল এর উপরও নির্ভর করে। গভীর সমুদ্রের ভেন্টগুলো (আগ্নেয়গিরির মুখ) পৃথিবীর ভূত্বকের নীচে থেকে ম্যাগমা দ্বারা উত্তপ্ত হয় এবং এগুলো যথেষ্ট গরম হয়, যা সমুদ্রের জল এবং আশেপাশের শিলা থেকে আসা খনিজগুলোর মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটাতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
আরও পড়তে পারেনঃ বরফ পানিতে ভাসে কেন?
সমুদ্রের পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ কম বেশি হয় কেন?
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা স্পষ্টভাবে জানতে পারলাম সমুদ্রের পানি লবণাক্ত কেন। মূলত সমুদ্রের প্রতিটি অংশই লবণাক্ত, কিন্তু আপনি কোথায় আছেন তার উপর নির্ভর করে সেখানে কতটা নোনতা পানি আছে তা পরিবর্তিত হয়। “মহাসাগরবিদরা বলেন, সমুদ্রের লবণাক্ততার কম বেশি হওয়ার কয়েকটি উপায় রয়েছে এবং সেগুলো সমুদ্রের পৃষ্ঠ বা সমুদ্রের তলদেশে ঘটে।” উদাহরণস্বরূপ, ভূমধ্যসাগরের পৃষ্ঠের জল নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের তুলনায় লবণাক্ত কারণ শুষ্ক জলবায়ুতে বাষ্পীভবন বৃদ্ধি লবণকে ঘনীভূত করে, যেখানে নিরক্ষরেখায় বৃষ্টি লবণকে পাতলা করে।”
নদীর পানি কেন লবণাক্ত নয়?
লবণাক্ততা সমুদ্রের পানির অন্তর্নিহিত বিষয় নয়। এটি সমুদ্রের ভেতরে প্রবেশ এবং ছেড়ে যাওয়া আয়নগুলোর একটি স্থির আদান-প্রদানের ফলাফল। এই একই প্রক্রিয়া জলের অন্যান্য অংশেও ঘটে, কিন্তু শুধুমাত্র আয়ন গ্রহণ সবসময় জলকে লবণাক্ত করার জন্য যথেষ্ট নয়।
নদী সবসময় প্রবাহমান থাকায় শিলা ক্ষয় থেকে আসা লবণ ধরে রাখতে পারেনা, যার কারণে নদীর পানি কখনো লবণাক্ত হয় না। কিন্তু, সকল নদীর প্রবাহিত পানি গিয়ে সমুদ্রে জমা হয়, সেই সাথে পানিতে থাকা খনিজ বা লবণও সমুদ্রকে যথারীতি লবণাক্ত করতে থাকে।