মানুষ ঘুমের মধ্যে হাঁটে কেন? করণীয় জেনে নিন

মানুষ ঘুমের মধ্যে হাঁটে কেন? অনেকে ঘুমন্ত অবস্থায় বাইরে চলে যান, নিজে নিজেই কথা বলেন, আবার ঘুমের মধ্যে কেঁদে উঠেন। কিন্তু, ঘুম থেকে উঠার পর এসব কার্যকলাপের কোন কথাই মনে করতে পারেন না। স্লিপ ওয়াকিং বা ঘুমের মধ্যে হাটা অনেকের কাছে রহস্যময় এবং ভৌতিক।

মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এই অবস্থাকে বলা হয় সমনাবুলিজম বা ঘুমন্ত অবস্থায় হাঁটা, ইংলিশে স্লিপ ওয়াকিং। ছোট ছেলে মেয়েদের মাঝে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়, তবে স্লিপ ওয়াকিংয়ে পূর্ণবয়স্করাও আক্রান্ত হতে পারেন। একটি দীর্ঘমেয়াদী গবেষণায় দেখা গেছে যে, ২ থেকে ১৩ বছর বয়সী প্রায় ২৯% বাচ্চারা ঘুমন্ত অবস্থায় হাটা বা এজাতীয় সমস্যায় আক্রান্ত। বয়স্কদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা মাত্র ৪%।

স্লিপ ওয়াক
ছবি- ঘুমন্ত অবস্থায় হাঁটা

স্লিপ ওয়াকিং সমস্যা যাদের রয়েছে, বাকী সবার মতো তারাও বিছানাতেই ঘুমিয়ে পরেন। কিন্তু ঘুম একটু গভীর হতেই তারা অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করেন। ঘুমের মধ্যে হাঁটার সমস্যা যাদের রয়েছে, তাদের মধ্যে কিছু অন্য বিষয়ও লক্ষ্য করা যায় যেমন, ঘুমন্ত অবস্থায় চিৎকার করা, কেঁদে ওঠা, চোখ খুলে রাখা, ঘরের মাঝে হাঁটা, যেখানে-সেখানে ঘুমিয়ে পড়া, দড়জা খুলে বাইরে যাওয়া, ইত্যাদি। মজার ব্যাপার হলো এসব কার্য্যকলাপ ঘটানোর সময়ে তিনি একদম ভাবলেশহীন থাকেন, অনুভূতিহীন থাকাটাই অন্যদের জন্য ভীতির কারণ হয়ে যায়। ঘুমের ঘোরে যারা হাটেন, তাদের মাঝে একটা কমন বিষয় হলো, ঘুম ভেঙে গেলে তারা আর মনে করতে পারেন না ঘুমের মাঝে কী করেছেন বা বলেছেন।

প্রকৃতির অনেক রহস্যই বিজ্ঞান তার যুক্তি এবং প্রমাণ দিয়ে ব্যখ্যা করেছে। ঘুমর মধ্যে হাটা বা Sleep walk নিয়েও ব্যখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

স্লিপ ওয়াকিংয়ের কারণ

জেনেটিক্যাল: 
 
পরিবারে কারও যদি এই সমস্যা থেকে থাকে অর্থাৎ মা-বাবা, দাদা-দাদী, বা নানা-নানীর থেকে থাকলে সন্তানদেরও স্লিপ ওয়াকিং করার আশঙ্কা বেড়ে যায়। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পিতা-মাতার কোন একজনের সমস্যা থাকলে ৪৭% বাচ্চা ঘুমের মধ্যে হাঁটা রোগে আক্রান্ত হয়, এবং পিতা-মাতা ‍উভয়েই আক্রান্ত হলে ৬২% শিশুর মধ্যে ‍স্লিপ ওয়াকিং সমস্যা দেখা দেয়।
 
ঘুম বঞ্চনা: 
দীর্ঘ সময় যাবৎ ঘুমের ঘুমের অভাবে মানুষ ক্লান্ত হয়ে যায়, এবং বিছানায় গেলে অতিরিক্ত গভীর ঘুমের কারণে ঘুমের ঘোরে হাটার সমস্যা হয়ে থাকে।
অ্যালকোহল:
সন্ধ্যায় অ্যালকোহল পান করা কোনও ব্যক্তির ঘুমের পর্যায়ে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে এবং ঘুমের ঘোরে হাঁটার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
মেডিসিন:
উত্তেজনা, ভয় দূর করার জন্য অথবা ঘুমের ঔষুধের প্রভাবের কারণে স্লিপ ওয়াকিং হতে পারে।

এছাড়াও প্রতিদিনের ঘুম যদি অনিয়মিত ও অপর্যাপ্ত হয়, জ্বর হলে, স্লিপ এপনিয়া বা ঘুমের মাঝে বিশেষ ধরনের শ্বাসবদ্ধতা থাকলে, এমনকি অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণেও ঘুমের মাঝে হাঁটার সমস্যা হতে পারে।

স্লিপ ওয়াকিং থামাতে করণীয়

স্লিপওয়াকিং এর চিকিৎসা রোগীর বয়স,  এটি কত ঘন ঘন ঘটে এবং তিনি কতটা বিপজ্জনক হয়ে ওঠেন তার উপর নির্ভর করে। শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কোনও চিকিৎসকের সাথে ঘুম সম্পর্কে কথা বলাই সবচেয়ে ভাল, সম্ভাব্য কারণ খুঁজে একটি উপযুক্ত চিকিৎসার পরিকল্পনা তৈরি করলে অনেকের ক্ষেত্রে স্লিপওয়াকিং সমস্যা দূর হয়ে যায়।

অনেকের ঘুম নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। কিছু ওষুধ খেলে স্লিপ ওয়াকিং হতে পারে। এসব ওষুধ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

স্লিপ-এপনিয়া একটা শ্বাসবদ্ধতার সমস্যা, যা ঘুমের মধ্যে হয়ে থাকে। স্লিপ-এপনিয়ার চিকিৎসা করালে অনেকের স্লিপ ওয়াকিং সমস্যার সমাধান হয়ে যায় বলে গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে।

বাচ্চার মা-বাবা একটা  নোট লিখতে পারেন, আপনার বাচ্চা কখন ঘুমায় এবং কখন তার সমস্যা শুরু হয়, সবকিছু লিখে ফেলুন। স্লিপ ওয়াকিং শুরু হওয়ার ১০-১৫মিনিট আগে বাচ্চাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিন, ৫ মিনিট জাগিয়ে রেখে তারপর ঘুমাতে পাঠান। এভাবে কিছুদিন চেষ্টা করলে কাজ হতে পারে। 

সতর্কতা:

বাড়িতে ঘুমের মাঝে হাঁটার সমস্যায় আক্রান্ত কেউ থাকলে কোনো ধরনের ধারালো বস্তু যেমন ছুরি, কাঁচি ইত্যাদি খোলা জায়গায় রাখা যাবে না।

সমনাবুলিজম রোগীদের একা থাকতে দেওয়া যাবে না। অনেকে দরজা খুলে বাইরে চলে যান, ছাদে যান নিচে অথবা রাস্তায় নেমে দুর্ঘটনায় পতিত হন। ঘর থেকে বাইরে যেন যেতে না পারেন সেই ব্যবস্থা করুন। হাঁটতে দেখলে বিছানায় নিয়ে যান, আবার শুইয়ে দিন। 

ঘুমের মাঝে হাঁটা বা স্লিপ ওয়াকিং নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।ঘুমের মধ্যে হাঁটার সমস্যা খুব কম মানুষেরই হয় এবং এটা মারাত্মক কোনো সমস্যা নয়। একটু সতর্কতাই আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনকে স্বাভাবিক রাখতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *