মানুষ জোরে কথা বলে কেন: একদিন এক সাধু তার শিষ্যদেরকে নিয়ে যমুনা নদীতে স্নান করতে গিয়েছিলেন। সেই নদীতে স্নান করতে যাওয়ার সময় তিনি নদীর পাড়ে দেখতে পেলেন একটি পরিবারের সদস্য একে অপরের সাথে ক্রোধে চিৎকার করছেন। অনেকক্ষণ ধরেই সাধু এবং তার শিষ্যরা তাদের চিৎকার শুনছিল, অবশেষে সাধু তাঁর শিষ্যদের দিকে ফিরে হাসলেন এবংতাদেরকে একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন, প্রশ্নটি ছিল এইরকম – ‘ক্রোধে লোকেরা একে অপরের উপরকেন চিৎকার করেন ?’
শিষ্যরা কিছুক্ষণ একে অপরের মুখেরদিকে চাওয়া চাওয়ি করলএবং ভাবতে লাগলো, ঠিক তখনই তাদের মধ্যে একজন শিষ্য বলেছিলেন –
ছবি- ঝগড়ায় কেন চিৎকার করি |
কারণ আমরা আমাদের ধৈর্যকে দিনদিন হারিয়ে ফেলছি, তাই আমরা অশান্ত হয়ে চিৎকার করছি।‘ তবে আরেকজন শিষ্য তার উত্তরে বলে উঠলো- ‘তবে, যখন অন্য ব্যক্তি আপনার ঠিক পাশেই আছে তখন কেন আপনি চিৎকার করবেন? এইভাবে একেএকে সব শিষ্যরা তাদের উত্তর দিতে লাগলেন। তবে অন্য শিষ্যরা কেউ সন্তুষ্ট হননি।
এরপরেই সাধু জিজ্ঞাসা করলেন, সবারই তো উত্তর দেওয়া হয়ে গেল তাহলে নিশ্চয়ই আর কারো কিছু বলার নেই। এই বলে শেষ পর্যন্ত সাধু ব্যাখ্যা করলেন, মানুষ ঝগড়া করলে কেন জোরে কথা বলে;
‘যখন দুজন লোক একে অপরের প্রতি রাগান্বিত হয়, তখন তাদের অন্তরের অনেক দূরত্ব থাকে। এই দূরত্বটি চাপা দেওয়ার জন্য তারা একে অপরের উপর চিৎকার করে । চিৎকারের মাধ্যমে মনের মধ্যে জমে থাকা অনুভূতি গুলো সামনের ব্যক্তির কাছে চলে আসে। ব্যক্তিযত বেশি ক্ষিপ্ত হয়ত তাই তীব্র ভাবে চিৎকার করে এবং সেই দূরত্বটিকে কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করে চিৎকার করার মধ্যে দিয়ে।যে কোন প্রকারে তার মনের কথাগুলো সামনের ব্যক্তিকে বুঝাতে চেষ্টা করে চিৎকারের মাধ্যমে।আবার তোমরা দেখবে যে দুজন ব্যক্তি একে অপরের প্রেমে পড়লে তারা চিৎকার এর পরিবর্তে মৃদুভাবে কথা বলে, কারণ তাদের অন্তর খুব কাছেআছে । তাদের মধ্যে দূরত্ব বলে কিছুই থাকেনা।
তখন একজন শিষ্য বললেন, তারা যখন একে অপরকে আরও বেশি ভালবাসে তখন কী হয়?
এ প্রশ্নের উত্তরে সাধু বললেন তারা কথা বলে না, কেবল ফিসফিস করে এবং তারা তাদের প্রেমে একে অপরের আরও কাছের হয়। তাদের এমনকি ফিসফিস করার দরকার নেই, তারা কেবল একে অপরের দিকে তাকাবে এবং এর মাধ্যমেই তাদের মনের কথার আদান প্রদান হয়।
তিনি তাঁর শিষ্যদের দিকে তাকিয়ে আরও বললেন,
‘সুতরাং যখন তোমরা তর্ক করবে তখন ভেবে চিন্তে তর্ক করবে, কারণ কথার বান হলো সবচেয়ে বড় বান যার সাহায্যে অন্তরগুলি দূরে সরে যায়, একে অপরকে আরও বেশি দূরত্ব দেয় এমন শব্দটি তাই কখনোই বলা উচিত নয়, না হলে এমন একদিন আসবে যখন দূরত্ব এত বেশি হবে যে ফিরে আসার পথ খুঁজে পাবেন না।’
আর সেই সাধু তার শিষ্যদের এটিও বললেন যে, কোন ব্যক্তি যদি রাগান্বিত হন তাহলে সেই ব্যক্তির সাথে অযথা তর্ক না বাড়িয়ে তার মনের কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করো বা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করো। তাহলে যে মন দূরে সরে গিয়েছে সেই মন আবার কাছে আসবে এবং সামনে থাকা ব্যক্তি তার নিজের ভুলটি একদিন ঠিক বুঝতে পারবে। এই ভাবেই আপন জনকে ভালোবাসার মাধ্যমে নিজের কাছে বেঁধে রাখা যায়।