গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কেন হয় এবং নিরাময়ের প্রাকৃতিক উপায় নিয়েই আজকের লেখাটি। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় যারা আক্রান্ত, তারাই জানেন কতটা অস্বস্তিকর এবং যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা এটি । সামান্য তেলের ভাজাপোড়া অথবা মসলাযুক্ত খাবার খেলেই শুরু হয়ে যায় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা । গ্যাসের সমস্যা হলে সাধারণত বুক, এবং গলায় জ্বালাপোড়া করতে থাকে । চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোন কোন কারণে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হয়ে থাকে এবং তা নিরাময়ের প্রাকৃতিক উপায় সমূহ ।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা |
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কেন হয় ?
১) অখাদ্য: অখাদ্য বলতে যে সকল খাবারে অতিরিক্ত মসলা, ভেজাল মসলা, পামওয়েল, টেস্টিং সল্ট, কনডেন্সড মিল্ক, সাদা চিনি, ডালডা, কাপড়ের রঙের মিশ্রণ, অতিরিক্ত তেল থাকে, পঁচা-বাসি খাবার, অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার, অতিরিক্ত চা-কফি পান ইত্যাদি ।
২) খাবারের পরিমাণ : অনেকেই আমরা বেশি খাবার খেতে পছন্দ করি । অনেকে তো বেশি খাবার খাওয়াকে ক্রেডিট মনে করেন । কিন্তু খাবারের পরিমাণ পরিমিত অবশ্যই পরিমিত হওয়া উচিৎ । পাকস্থলিকে যদি আমরা ৩ বাগে ভাগ করি, তাহলে একভাগ খাদ্য, একভাগ পানি এবং একভাগ খালি রাখা উচিৎ ।
অনেকে ভাবেন না খেয়ে থাকলে গ্যাসের সমস্যা হয়ে থাকে, কিন্তু এ ধারণা ঠিক নয় । রোজার সময় মুসলমানরা ১৫ থেকে ১৬ ঘন্টা না খেয়ে থাকেন, কিন্তু এসময় গ্যাসের সমস্যা বৃদ্ধি না পেয়ে বরং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা ঠিক হয়ে যায় ।
৩) মানসিক দুঃশ্চিন্তা বা অশান্তি : মানসিক চাপ, মানসিক আঘাত, স্ট্রেস কিংবা এংগজাইটি গ্যাস্ট্রিকের অন্যতম প্রধান কারণ । আপনি মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার আগে যদি ভাবতে থাকেন, আমার গ্যাস হতে পারে, তাহলে গ্যাসের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কারণ টেনশনে মানুষের ব্রেণ থেকে অতিরিক্ত একধরণের রস নিঃসরণ করে ।
৪) কথপোকথন : ইসলামে খাবারের সময় সালাম দিতে এবং নিতে নিষেধ করা হয়েছে । খাবার সঠিকভাবে হজম করার জন্য মস্তিষ্ককে এসিড নিঃস্বরণের জন্য নির্দেশ দিতে হয় । কিন্তু খাবারের সময় যদি মস্তিষ্ক কে অন্য কাজে ডাইভার্ট করে দেওয়া হয় অন্য কোন কাজের মাধ্যমে যেমন কথা বলা , তাহলে এসিডের পরিমাণ কম বেশি হয়ে যায় এবং খাবার হজমে সমস্যা হয় ।
৫) ধুমপান : ধুমপান এবং বিভিন্ন ঔষুধ সেবনের জন্য গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হয়ে থাকে ।
৬) ঘুম : ঘুমের সমস্যা থাকার কারণে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হতে পারে ।
আরো পড়ুনঃ এন্টিবায়োটিক সিরাপ ঝাঁকিয়ে খেতে হয় কেন?
গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় করণীয় ;
১) খাবার খাওয়ার পর সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়বেন না ।
২ ) অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন ।
৩) যেসকল শাক-সবজি সহজে হজম হয় না ( যেমন- বাধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি, পালংশাক ইত্যাদি ), খাওয়া থেকে বিরত থাকুন ।
৪) গ্যাস হলে যেকোন ধরণের ডাল জাতীয় খাবার যেমন – মসুর ডাল, বুট, ছোলা, খেসারি ডাল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন ।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা নিরাময়ের উপায় :
১) ব্যায়াম : যেকোন ধরণের ব্যায়াম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী । ব্যায়াম মানুষের ক্ষুধা এবং হজমশক্তি বাড়িয়ে দেয় । তাছাড়া ব্যায়াম করলে পেটে চর্বি এবং গ্যাস জমতে পারেনা ।
২) দই এবং মাঠা : গ্যাসের সমস্যা হলে সাথে সাথে একটু দই খাওয়ার চেষ্টা করুন । দই এবং মাঠায় রয়েছে প্রোবায়টিক রাসায়নিক উপাদান, যা হজম করতে সাহায্য করে ।
৩) রসুন : গ্যাসের সমস্যা নিরাময়ে রসুন অসাধারণ একটি পথ্য ।গ্যাসের সমস্যায় এক কোয়া কাঁচা রসুন খেয়ে নিলে এসিডের ক্ষরণ ঠিক হতে শুরু করবে ।
৪) আদা : আদা একটি কার্যকরী অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা গ্যাস বা অম্বল সমস্যা দূর করে । আদা চুষে বা চা করে খেতে পারেন ।
৫) শসা : শসা একটি স্বাস্থসম্মত খাবার । পেট ঠান্ডা রাখার কার্যকরী সমাধান । এতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান এবং ফ্লেভানয়েড যা গ্যাসের ব্যাথা এবং জ্বালাপোড়া কমিয়ে আনে ।
৬) লবঙ্গ : লবঙ্গ তাৎক্ষণিকভাবে গ্যাসের সমস্যা দূর করতে পারে । ২-৩ টি লবঙ্গ দানা মুখে নিয়ে চুষতে থাকুন, গ্যাসের সমস্য দূর হবে ।
৭) ডাবের পানি : ডাবের পানি পাকস্থলির সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী । ডাবের পানি হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে । গ্যাসের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে প্রতিদিন ডাবের পানি পান করুন ।
শেষ কথা : গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কেন হয় লেখাটি পড়ে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে, আপনার প্রতিদিনের লাইফস্টাইল এবং খাদ্য অভ্যাসই গ্যাস্ট্রিক সমস্যার মূল কারণ । তাই উপরোক্ত আলোচনা থেকে শিক্ষা নিয়ে লাইফস্টাইল এবং খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন করুন এবং গ্যাস্ট্রিকের যন্ত্রণামুক্ত জীবন উপবোগ করুন ।