প্রথমত আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে সবকিছুই অবিরাম পৃথিবীর ঘূর্ণনের সাথে একই বেগে ঘুরে চলেছে। যেহেতু আমাদের পৃথিবী এবং আশেপাশে যা কিছু আছে সবকিছু একই বেগে ঘুরছে তাই আমাদের কাছে মনে হয় যে সবকিছুই স্থির সুতরাং এজন্য আমরা পৃথিবীর ঘূর্ণন টের পাই না। মূল কারণ এটাই, তবে বোঝার সুবিধার্থে আরো সহজ করে বলার চেষ্টা করা যাক।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, গতিশীল বাস হঠাৎ থেমে গেলে আমরা সামনে ঝুঁকে পড়ি, আবার একইভাবে থেমে থাকা বাস চলতে শুরু করলে পিছনের দিকে হেলে যাই। কোন চলন্ত বাস যদি অবিরাম একই গতিতে ঝাঁকি ছাড়া চলতে থাকে, আমরা বাসের গতি অনুভব করিনা। কিন্তু বাস অসম গতিতে চললে আমরা গতির তারতম্য এবং বাসের চলনশীলনতা টের পাই।
পৃথিবী তার শুরু থেকেই অবিরাম ঘুরছে, ন্যানো সেকেন্ডের জন্যও কখনো এই ঘূর্ণন বন্ধ হয়নি। অর্থাৎ বাস চলা শুরু করলে যে ধাক্কাটা পাই, পৃথিবীর ঘূর্ণনে আমরা এমন কিছু কখনো অনুভব করিনি। আমাদের অনুভূতি পার্থক্য করতে হলে উভয় অবস্থার সাথে পরিচয় থাকতে হবে, কিন্তু আমাদের স্থির পৃথিবীর সাথে পরিচয় হয়নি।
ভুমিকম্প আমরা টের পাই। কারণ, ভূমিকম্প এমন এক অবস্থার সৃষ্টি করে, যার সাথে আমরা ঠিক অভ্যস্থ নই। কিন্তু আমাদের পৃথিবী বাসের মতো অসম গতিতে চলেনা, থেমেও যায়না কিংবা ভূমিকম্পের মতো হঠাৎ ধাক্কাও দেয়না।
আপনি যদি বিমানের সিটে বসার সাথে সাথে একঘন্টার একটা ঘুম দিতে পারেন, বিমান তার নির্দিষ্ট উচ্চতা এবং সমবেগে আসার পর যদি ঘুম থেকে উঠেন, জানালার দিকে না তাকালে হয়তো আপনি চেচিয়ে উঠবেন, আরে কন্ট্রাক্টার সাহেব এখনো বিমান ছাড়েন না কেন!! (হাহা জাস্ট কিডিং)। তবে এটা সত্যি যে আপনি কয়েক হাজারফুট উচ্চতায় আকাশে উড্ডয়মান বিমানে আছেন এই অবস্থাটা সহজে বুঝতে পারবেন না।
যতগুলো উদাহরণ আমরা দেখলাম সবগুলোর গতি এবং স্থিতির অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আমরা জানি। কারণ এসকল বস্তু বা ব্যক্তি সুষম বেগে চলতে পারেনা। আবার এরা আদিকাল থেকে চলনশীলও নয়, একমাত্র পৃথিবী ছাড়া। বাস চলার আগে আমাদের ধাক্কা দিয়ে জানান দেয় বস চললুম। কিন্তু পৃথিবী কাউকে পরোয়া না করেই আদিকাল থেকেই সমবেগে চলছে।
আমাদের কোপারনিকাস বাবু যদি না বলে দিতেন যে, পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে তাহলে হয়তো এই প্রশ্ন মনেও আসতো না।
আরো কিছু কারণ উল্লেখ করা হয় যেমন, পৃথিবীর আয়তনের তুলনায় আমরা খুবই ক্ষুদ্র। এজন্য পৃথিবী ঘুরছে কিন্তু আমরা টের পাই না। পৃথিবীর ব্যাসার্ধ প্রায় ৬৪০০ কিলোমিটার এবং ওজন প্রায় ৬×১০^২৪ কেজি। পৃথিবীর তুলনায় আমরা এতই ক্ষুদ্র যে, আমরা পৃথিবীর ঘুর্ণণ বেগ বুঝতে পারিনা।
পৃথিবীতে অবস্থিত সকল বস্তুকেই পৃথিবী তার নিজের কেন্দ্র বরাবর টানছে। একে অভিকর্ষ বল বলে। আর এই বলের জন্যও আমরা পৃথিবীর ঘূর্ণণ অনুভব করতে পারি না।