বাস ভ্রমণে ঘুম আসে কেন?

গাড়িতে ভ্রমণের সময় ঘুম আসে কেন ! আমাদের মাঝে অনেকের মনেই এই প্রশ্ন রয়েছে, অনেকেই জানতে চান, বাস ভ্রমণে ঘুম পায় কেন? গাড়িতে উঠলেই এমন দৃশ্য দেখা যায়, কিছু মানুষ সবকিছু ভুলে গিয়ে আরামে ঘুমাচ্ছে। কেউ কেউ তো নাক ডাকাও শুরু করে দেন।
তবে, আমার কিছু বন্ধু আছে যারা দীর্ঘপথ ভ্রমণে যেতে পছন্দ করে। তারা কেবল গাড়িতে উঠে বসে কয়েকশ মাইল নির্বিঘ্নে আনন্দে কাটাতে চায়, এবং তারা পারেও বটে।
আমি? আমি মোটেও সেরকম নই। আমার তো বাসে উঠলেই ঘুম চলে আসে। আমি জানি, আমার মতো এমন অনেক মানুষ আছেন, যাদের বাসে বা গাড়ীতে উঠলেই ঘুম চলে আসে। প্রশ্ন হলো, বাসে জার্নি করলে ঘুম কেনো আসে? আমি নিজের জন্যই এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছি। চলুন, কেন গাড়িতে ভ্রমণের সময় ঘুম আসে কেন? সেবিষয়ে আপনার সাথেও শেয়ার করি।

দ্রষ্টব্য: কিছু মানুষের বাসে বা ট্রেনে ঘুম পায় কেন তার কারণ বিষয়গত, এবং এটি সর্বজনীন নয়। কিছু লোক দূরপাল্লার সড়ক ভ্রমণে বিরক্ত হয় না। এই নিবন্ধে, আমরা কেবলমাত্র কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো যা গাড়ি, বাস বা বিমানের দীর্ঘ যাত্রা আপনাকে ক্লান্ত বোধ করার পিছনে কারণ হিসেবে কাজ কর।

আরও পড়ুনঃ বই পড়তে গেলেই আমাদের ঘুম আসে কেন?

বাস ভ্রমণে ঘুম ও ক্লান্তিভাব আসার পিছনের যত কারণ:

বাস ভ্রমণে ঘুম পায় কেন, বাস ভ্রমণে ঘুম পায় কেন, কিছু মানুষের বাসে বা ট্রেনে ঘুম পায় কেন, বাসে জার্নি করলে ঘুম কেনো আসে,

চেয়ারে বসে রাস্তায় ভ্রমণ করা সহজ নয়। সমস্ত রোড ট্রিপে এক জায়গায় অনেক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়, যেটা খুব লম্বা বক্তৃতার জন্য সিটে বসে থাকার চেয়ে খুব একটা আলাদা না।

যাত্রার সময় ট্র্যাফিকের কারণে চলন্ত যানবাহনের গতি পরিবর্তন হয়, যার ফলে আপনি সামনে পিছনে ধাক্কা খাবেন, রাস্তায় বাঁক নেওয়ার সময় দোল খাবেন। গাড়িটি যদি পুরানো হয়, অমসৃণ আসন এবং অতিরিক্ত ঝাঁকি হয় এমন ইঞ্জিন, বা গর্ত গর্ত রাস্তা ছাড়া বাস বা গাড়ী ভ্রমণটি স্থির মনে করতে দেয় না।

এই সমস্ত কারণগুলো অর্থাৎ রাস্তা, যানবাহন এবং ট্রাফিক! এসবের উপর আপনার যাত্রা কতটা আরামদায়ক তা নিশ্চিত করে৷

আরও পড়ুনঃ ট্রেনের ইঞ্জিন বন্ধ করা হয় না কেন?

একটি বাস যাত্রাপথে অনেকবার গতি পরিবর্তন করে, যা যাত্রীরা খুব সূক্ষ্মভাবে অনুভব করেন। এই দোলনা, ঝাঁকুনি এবং লাফ শরীর থেকে এনার্জি শুষে নেয়, যদিও আপনি হয়তো কখনোই সেসম্পর্কে জানতেন না। আরো ক্লিয়ার করে বলি!

মস্তিষ্ক আপনার নিয়মিত নড়াচড়ায় অঙ্গবিন্যাস সোজা রাখতে পেশীগুলোকে সবসময় একটিভ রাখে। দুটি অঙ্গের মধ্যে এই অবিরত কাজ ২-৩ ঘন্টার বেশি স্থায়ী হতে পারে, যা প্রচুর শক্তির ক্ষয় করে। এতবেশি শক্তি ক্ষয় হলে শরীরে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়, আমরা ক্লান্ত বোধ করি, তখন আমাদের ঘুমের প্রয়োজন হয়। একই কারণে গাড়ি চালালেও ঘুম ঘুম ভাব চলে আসে।

ট্রেন ভ্রমণ তুলনামূলকভাবে কম ক্লান্তিকর, কারণ তারা রাস্তার অটোমোবাইলগুলোর মতো ঘন ঘন গতি কমায়-বাড়ায় না, দিক পরিবর্তন করে না। তাই ট্রেণ ভ্রমণে মানুষের বাস ভ্রমণের তুলনায় কম ঘুম পায়।

ফ্লাইটে ক্লান্তি সৃষ্টির কারণ:

উচ্চতা: আপনার শরীরকে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে মানিয়ে নিতে হবে। যদিও কেবিনের চাপ উচ্চতার পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য করে কিছুটা সহজ করে তোলে, তবুও বেডরুমের চেয়ারে বসে যে চাপ অনুভব করবেন, বিমানের ভিতরে তারচেয়ে অনেকটাই বেশি চাপ অনুভূত হবে।

ডিহাইড্রেশন: এয়ারলাইনগুলোর কেবিনে শ্বাস-প্রশ্বাসের বায়ু নিয়ন্ত্রণ করে কেবিনের চাপ বজায় রাখা হয়। এই কারণেই কেবিনের এয়ার ভূমন্ডলের বায়ু থেকে ১৫% বেশি শুষ্ক, যা যাত্রীদের ডিহাইড্রেট করে তোলে। বিমানের খাবারের স্বাদ এত খারাপ হওয়ার অনেক কারণের মধ্যে এটিও একটি।

পরিবেশ: ফ্লাইটের সময় আওয়াজ, কাঁপুনি, ঘূর্ণায়মান, অশান্তি এবং অন্যান্য কম্পনগুলো মানব দেহের স্বাভাবিক গতিবিধি নয়। তাই শরীর এসবের বিরুদ্ধে ক্রমাগত নিজেকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, যার জন্য এনার্জি খরচ হয়। একারণে, দীর্ঘ ফ্লাইটের পরে আপনি ক্লান্ত বোধ করবেন।

মনস্তাত্ত্বিক ফ্যাক্টর
: আপনি যখন একটি ফ্লাইটে বা বস ভ্রমণে থাকেন, আপনি নিচের অবচেতন মনেই নিজের এবং আপনার আশে-পাশের সম্পর্কে একটু সচেতন হন। আপনার চারপাশে অনেক অপরিচিত লোক রয়েছে এবং আপনি অবচেতন মনেই সতর্ক বা চিন্তিত থাকেন, যা শুধু আপনিই নন, বরং বেশিরভাগ মানুষের মনের স্বাভাবিক অবস্থা। তাই, এই মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা  ফ্লাইট ভ্রমণের মানসিক অবসাদ বাড়িয়ে দেয়। এই কারণেই বিজনেস ক্লাস ফ্লাইট এত জনপ্রিয়। কেননা, আপনি সেখানে আরও বেশি জায়গা পাবেন এবং এটি অনেক বেশি আরামদায়ক।

যাহোক, ভ্রমণ ক্লান্তির অনুভূতি খুবই বিষয়ভিত্তিক এবং ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পরিবর্তিত হয়। যারা দীর্ঘপথ ভ্রমণ বা ফ্লাইটে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তাদের ফ্লাইটে, গাড়িতে ও বাস ভ্রমণে ঘুম আসার পিছনে এই কয়েকটিই মূল কারণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *